বৃহস্পতিবার, ২১ জুন, ২০১৮

" পুজোনীয় তুমি " - সঙ্ঘমিত্রা প্রামাণিক চ্যাটার্জ্জী



চিঠির প্রথমে আমার বিজয়ার প্রণাম নিও।
        কেমন আছো জানতে চাইবো না। জানি ওখানে শান্তিতেই আছো। আজ তোমাকে কত গুলো কথা বলতে চাই। তুমিই তো বলতে,"দেখবি, এমন একটা দিন আসবে সবাই তোকে অবাক হয়ে দেখবে। ইয়া একটা লম্বা গাড়ি আমার ভাঙা ঘরটার সামনে দাঁড়াবে। আশেপাশের লোকজন চোখ কপালে তুলে তোকে শুধু দেখবে।" কই,তেমন তো কেউ দেখেনা আমায়। সত্যি বলছি কেউ দেখেনা। আমার কোনো লম্বা ইয়া বড় গাড়ি কেনা হয়নি গো। হয়তো সেই অভিশাপ,হ্যাঁ মনে পড়ে তুমিই বলেছিলে আমি যখন তোমার অবাধ্য হয়েছিলাম তখন, "তুই কোনোদিনও সুখী হবিনা।" তোমার আশির্বাদ আমার লাগলো না কোনো কাজে কিন্তু তোমার অভিশাপটা কি রকম লেগে গেলো দেখো। জানো, তুমি যাদের নাম করে বলতে ওমুক মেয়েটা কাঁখে একটা, হাতে একটা বাচ্চা নিয়ে তোকে এসে বলবে, "কি দিদি তুই কেমন আছিস?এই দেখ আমার বাচ্চারা, ও ট্যাঁপা আর ও বুঁচি। তুই তখন ঠোঁটের ফাঁকে হাসি এনে ব্যাগ থেকে দুটো বাচ্চার হাতে টাকা দিয়ে বলবি ভালো করে মিষ্টি খাওয়াস ওদের।" জানো,ওর বরের লম্বা একটা গাড়ি। একটাই বাচ্চা। ছুটিতে কত জায়গায় বেড়ায়,কত ছবি পাঠায় ফেসবুকে, হোয়াটস অ্যাপে আমাকে। তুমি তখন অমন কেন বলতে গো? আমি নাকি বিদেশ যাবো আমার বরের সাথে, তুমি সব সময় বলতে। অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গায় আমি ঘুরবো। জানো, একবার ডায়মন্ড হারবার গেলেই আমাকে মাসের টাকার হিসেব করতে হয়,গুনে গুনে খরচ করতে হয় তখন। একদিক বাদ দিয়ে আর একদিকের খরচ সামলাই। তুমি আরো বলতে, "তুমি আমার বাড়ি আসবে; আমার রাঁধুনি, চাকর-বাকর তোমায় নানান কিছু রান্না করে  বসিয়ে যত্ন করে খাওয়াবে আর আমি তাদের বসে বসে হুকুম করবো।" জানো,আমার ঘরের রান্না বান্না,কাজ কম্ম সব আমিই করি। আমার একটা ঠিকে ঝিও নেই। তুমি আমায় আমার গোটা জীবনে শুধু আশির্বাদই করে গেছো। কিন্তু জীবনে একবারই অভিশাপ দিয়েছিলে। সেটাই ফলে চলেছে জীবন জুড়ে। তোমাদের অপছন্দ হয়েছিল আমার অবাধ্যতা,তবুও কেন দিলে সেই অভিশাপ? জিতে গেলে তো? আর আমি জেতার ভান করে চরম ভাবে হেরে বসে আছি জানো..? খাওয়া দাওয়ার কোনো অভাব হয়না আমার। সে সব ঠিক ঠাকই আছে। তোমার বাড়িতেও যেমন কষ্টে চলেছি আজও তেমন না হলেও স্বচ্ছলতা নেই আমার জীবনে। তবে সাধ আমার একটু একটু করে মরতে মরতে একেবারে মৃত। আমার গয়নার সাধ হলে আমাকে বলা হয়, "তুমি আর পাঁচজনের মত সাধারণ গয়না পরা নারী নয়। গয়না দিয়ে কী করবে?" এক একটা মানুষের তিনটে করে হাত। ডান বাম আর অজুহাত। আমার সাধ মরে এই ভাবেই।বেড়ানোর সাধ জাগলে যদি বলি বেড়াতে যাবো তবে শুনতে হয়,"লোকের কথায় নেচোনা। বেড়িয়ে কী হবে?" শরীরের অসুস্থতায় কাজের লোক রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করলে শুনতে হয়, "লোককে দেখে অমনি কাজের লোক রাখার ইচ্ছা জাগলো?নিজের কাজ নিজে করা ভালো। এতে শরীর সুস্থ থাকবে। আর আমাদের এতো উদ্বৃত্ত নেই যে কাজের লোকে টাকা ঢালবো।" এতকিছুর পরও লোকে জানতে যখন চায় আমি কেমন আছি। হেসে বলি "আমি ভালো আছি।"
                                                ইতি--
                                 আমি সেই মৃতপ্রায় কন্যা




                                                                                                     - সঙ্ঘমিত্রা প্রামাণিক চ্যাটার্জ্জী

সোমবার, ১১ জুন, ২০১৮

" প্রশ্ন " - সুফি রায়


সকালবেলায় ঘুম ভাঙল প্রভাতফেরীর বাজনা শুনে।
ছোট্ট খোকন দৌড়ে গেল মনে অনেক প্রশ্ন নিয়ে॥
সামনে সবার গেরুয়া পোশাক,তার পিছনে সাদার সারি।
ঐ দেখা যায় সবুজ পোশাক,দেখতে মজা লাগছে ভারি॥
খোকন শুধায়,"হ্যাঁ গো মা,ওরা যাচ্ছে কোথা এমন সাজে?
সকালবেলায় গাইছে গান,ধাই-ধমা-ধম মাদল বাজে"॥
আলতো হাতে আদর করে মা হেসে কন,"তাও জানিস নে?
আজ যে মোরা স্বাধীন হলেম,কত শত প্রাণের দানে॥
দেশের মাটি ডাক দিল যেই,ছুটল তারা আপন ভুলে।
ভায়ের অশ্রু পান করে যায় মৃত্যুনদী অবহেলে॥
পরের ঘরের বন্দীদশায় মায়ের আঁচল লুটায় ভূমে।
নিজের রক্ত ফেরি করে মায়ের মুকুট আনল জিনে॥
তাঁরাই সকল শহীদ যারা করল এমন মৃত্যুবরণ।
তাঁদের জন্যই নতুন ঊষা,আশা-ভরসা,জীবন যাপন"॥
খোকন শুধায়,
"নিজের জীবন দিলযারা,তাদের জন্য একটিই দিন?
আর বাকি দিন ভুলেই থাকে,মানুষ কেন এমন হীন?
বলতে পারিস,কোন দুখেতে নিজের জীবন করল পণ?
কোন সুখেতে মৃত্যুমুখেও বল মা ওদের ভরল মন?
আমার মতন ওঁরাও তো মা ছিল কারোর খোকনসোনা--
তাদের জন্য একবারও তো তোমার চোখটা ভিজল না..?
আমায় তবে জাগাস নে মা,আর একটুকু ঘুম যাই।
স্বপ্নঘোরে তাঁদের পায়ে হাতটা আমার ছোঁয়াই"॥
খোকার কথায় মায়ের মনে সে এক বিষম লাজ।
মন বলে তার এ এক বুঝি আধুনিকতার সাজ॥


বি: দ্র:- জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীকে আমাদের পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম। 

সেই সঙ্গে বর্তমান কাল পর্যন্ত দেশের প্রতি বলিপ্রদত্ত মহৎপ্রাণদের প্রতি এই কবিতাটি উৎসর্গীকৃত। 


                                                     - সুফি রায়
                                              © Copyright Protected









" আমরা " - অনির্বাণ রায়



এই ঘোর শীতেও কালবৈশাখী
সেই তোর সাথেই হল দেখা-দেখি।
এফোঁড়-ওফোঁড় করা তোর চাহনি..
তবু, অভিমান সরিয়ে ফিরে তাকানো হয়নি।

আমি আছি, আমি নেই তোর কী তাতে??
অটোর ভাড়া গুলিয়েছি রাস্তাতে
না চেনার অভিনয়ে এড়িয়েছি দুজনেই--
ওপারে জানি না, তবে
ভাঙচুড় চলছে এখানেই॥



                               - অনির্বাণ রায়
                                   © Copyright Protected



" হেরে যাওয়া কেউ " - অয়ন মন্ডল


ভাবনারা পালাতে চাইছে দূরে নেই কোনো দায়বদ্ধতা; 
চিন্তাগুলো এলোমেলো দুঃস্পর্শ, 
একজোটে পালাবার পথে গুঞ্জনসম কিছু বাজছে মনে, পারছি না! 
হেরে যাওয়া মানুষ কি? 
অন্তরের জলদগম্ভীর কন্ঠ চিকিৎসায় ব্যস্ত আছে ওর দায়বদ্ধতা,
গুছিয়ে বলতে চাওয়া চাতক পাখি যেনো; 
হয়তো আমি কেউ, ফিরতে চাওয়া কেউ, 
ভাবনায় সুস্থ আমি,
সত্যি কি?! 
যেনো হেরে যাওয়া এক মানুষ ।
   

                                      - অয়ন মন্ডল

                                              © Copyright Protected