বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯

" সেদিন " - মনোজ রায়


মনে পরে সেদিনের সেই দিনটি?
যেদিন বসে ছিলাম তুমি আর আমি
করে অধিকার পার্কের সেই কোনটি।

একটানা বৃষ্টি পড়ছিল মুষল ধারায়।
চেয়েছিলাম ভিজতে, কিন্তু পারিনি
তাই এসেছিলাম দুজনে এক ছাতার তলায়।

নিঃশব্দে কাটিয়েছিলাম অনেকটা সময়
একে অপরের দিকে চেয়ে, কি যেন
এক অদ্ভুত অনুভূতি জেগেছিল অন্তরময়।

হয়তো তুমিও বুঝেছিলে সেই অনুভূতি-
সেদিন কিছুই বলতে পারিনি।
ভয় ছিল মনে, তোমায় হারাই যদি...।

বৃষ্টি থামলে... করছিলে তাড়াহুড়ো
"বাড়ি যেতই হবে, হয়েছে দেরি"
ঘড়িতে তখন বেজেছিলো পাঁচটা বারো।

তুমি গেলে চলে নিজের পথ ধরে;
যেন আরো কিছু সাথে নিয়ে-
ভাবিনি নেবে তুমি আমাকেও আপন করে॥


                                      ©  মনোজ রায়  ©

" মেশানো উষ্ণতা " - ধ্রুব বিকাশ মাইতি


আমি মিশে গেছি......
অসময়ের বাঁধভাঙা বৃষ্টির শীতল মেজাজে,

সে আমায় গভীর শ্বাসে নিমেষের মধ্যে
বার বার জড়িয়ে ধরেছে আগন্তুক পথে,

শরীরগুলো সব লতিয়ে লতিয়ে পড়ছে I

ওরা যে ভালোবাসায় মিলনের কাঙাল!
তোমরা ওদের একটু ভালোবাসা দাও;
দেখবে ওরাও উজার করে সবটাই দেবে।

কিছু মানুষ-জন দেখি সবুজ মাঠে-ঘাটে
ওদের সাথে জড়াজড়ি করছে তৃষ্ণায়।

আর আমি কিছুক্ষণ আদর করার পর
লুকোতে চেয়েছিলাম কারোর বারান্দায়..
কিন্তু তখনও দেখি আমায় জড়িয়ে রেখেছে,
দুজনের মিলনের নতুনে মেশানো উষ্ণতা
মাটিতে ঝরছে বাসন্তিকের নব আবেগে।

তারপর আবার অনেকটা... সময় মিশেছি।


                                © ধ্রুব বিকাশ মাইতি ©

মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৯

" আমার আমি " - প্রিয়া কর্মকার


                   মার 'আমি'টার গত দুদিন আগে মৃত্যু হয়েছে, এক ভীষণ বড়ো ধরনের ধাক্কায়। না না... কোন বাহ্যিক দুর্ঘটনায় ঘটেনি তার সাথে। ঘটলে লিখতাম কী করে তার মৃত্যু কাহিনি? হাহাহা...!! তবে সে যে আর বেঁচে নেই এবং ক্ষণিক সময়ের বেড়াজালে কিভাবে তার তিলে তিলে মৃত্যু হল সে কেবল নিজেই উপলব্ধি করেছি। তবুও তার মৃত্যুর অনুভূতি আরেকজনও নিশ্চয়ই পাচ্ছে। থাক সে কথা। সে তো জানতোই যে আমার 'আমি'টা কতখানি অভিমানী। আমার 'আমি'টা এমনিতেই নানান কারণে ভীষণ রকম দুর্বল ছিলো, কোনো কিছুই ভালো লাগত না তার। তবে তার মৃত্যুর মাস ছয়েক আগে থেকে তাকে হাসিখুশিতে উজ্বল থাকতে দেখেছিলাম সবর্দা। যে কারণেই হোক না কেন তার খুশি আমি মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু, কারণটা যখন আজ অনেক কারণ দেখিয়ে আমার 'আমি'কে অস্বীকার না করলেও স্বীকার করতে দ্বিধা বোধ করছিলো, তখন আমার 'আমি' আর বোধহয় সহ্য করতে পারলো না এই অভাবনীয় ধাক্কাটা। তাই সে চলে গেল, তাকে ছেড়ে। তবে নিঃস্ব করলো না আমাকে বা তাকে। দিয়ে গেল অফুরন্ত শক্তি, লেখনি শক্তি। তবে প্রশ্ন একটাই, এই মায়াময় পৃথিবীর মায়াজাল কাটিয়ে ওঠা আমার একার পক্ষে কি সম্ভব হবে? ভীষণ ভয়ও হয়, কোনো এক অদৃশ্য মায়াজালে নতুন কোনো ক্ষতের দাগ পেতে কোনভাবেই পুনর্জন্ম লাভ করবে না তো আমার 'আমি'টা? সত্যিই জানি না।


                                                                © প্রিয়া কর্মকার ©

" খেলনাপাতি " - শিবাশিস মৌলিক


মন কি তোর খেলনাপাতি?
খেলবি শুধুই ভাঙাচোরার খেলা!
খেলনাবাটি নিয়েও তো
 স্বপ্ন দেখে মেয়েরা —
মা সেজে সংসার করার।

বয়স বাড়লে স্বপ্নে বদল হয়
বদলায় মানুষের মন!
প্রয়োজনে বদলায় সঙ্গীও।
তা বলে অকারণে?

তোর সঙ্গে খেলব ভাবি
অন্তহীন খেলা,
হার-জিতহীন খেলা।
তুই বারবার খেলা ঘেঁটে দিস
নষ্ট করিস সময়,
জেতার সুযোগ।

আমি হারলেই কি জিতিস তুই?
নাকি হেরে গিয়েই
মিলিত হই দুজনে।
পরাজিতের আসনে
আমি তুই একাকার।



                                           © শিবাশিস মৌলিক ©

" একটু আশা " - বিউটি ঘোষ


তোর জন্য স্বপ্ন দেখি নয়ন ঠুলি উঠিয়ে তাই-
বিশ্বজগৎ কাঁপিয়ে দিয়ে বলবো শুধু তোকেই চাই।
লিখে দেখো চলার পথে জানবে প্রতি ধূলিকণা,
আমি আপন পথভুলা যে, হতে পারিস তুই আনমনা।
ফিরিয়ে নিয়ে আসবো আমি স্বর্গ পথেও দেবো পাড়ি।
ভাঙ্গবো আমি হাজার দুয়ার স্বর্গ পথে ওই যে তারই।
দত্যি-দানব এক হয়েছে কেড়ে নিতে আমার গতি, 
আমার অহং গতির ধারায় দেখবো তাদের পরিণতি।
শুকনো কাঠেও ধরবে যে ওই পুষ্পশাখার হাজার শাখি;
আজও আমি বিশ্বমাঝে তোকে নিয়েই স্বপ্ন আঁকি॥

                                          © বিউটি ঘোষ ©

" জীবনপণ " - আবুল হাসেম


ভাবনাশক্তির প্রখরতাই আমি দর্শন পেয়েছি সেই জগৎ,
যা সবার দৃষ্টির অগোচর।
কল্পনাময় জগৎ থেকে তাকে বাস্তবে টেনে আনবোই আপন শক্তিতে।
মানব মনের পশুত্বকে বশ করবো আপন ভাবনা শক্তির তীব্র প্রভাবে।
নবজাতকের অবতারে প্রবেশ করাবো আপন চিন্তন শক্তি।
মানবের অন্তরে লিপিবদ্ধ করবো আপন ভাষা। 
তাদের মুখের ভাষাই আমার প্রাপ্তি
দেবে গতি আপন পথের ধারায়।
সেই ভাবনাতেই জাগ্রত চিত্তে রয়েছি সদা।


                                                © আবুল  হাসেম ©

" মস্ত লেখক " - অরুণোদয় ভট্টাচার্য



 আমি মস্ত লেখক সারা রাত জেগে রই
 আমার মাসে মাসে মোটা মোটা বেরচ্ছে বই ।
 আমার ছড়া যায়না পড়া
  ছন্দমিলের বালাই ছাড়া,
  গল্প আমার যুগান্তকারী
  মুড়ো-ল্যাজা কেউ না পায় থৈ ।

 আমার প্রতিভা সে আবার বহুমুখী,
 নাটক যা লিখি ফর খোকা-খুকী ।

 উপন্যাসের এমন বিন্যাস
 জানত কেবল গ্রেট বেদব্যাস,
 আমার essay প'ড়ে হেসে
 কুটোপাটি নিজে যে হই ।


                                        © অরুণোদয় ভট্টাচার্য ©

" হঠাৎ দেখা " - মনোজ রায় | সম্পূর্ণ গল্প



— এতো বছর পরেও তুই শুধরালি না, কথায় কথায় রাগ করার স্বভাবটা এখনো রয়ে গেছে তোর। 
— হুমম কিছু কিছু স্বভাব এতো সহজে যায় নাকি? 
— মা হয়ে গেছিস তুই, এখনো সেইরকম আছিস। 
— একদম। তুই কেমন আছিস? 
— যা আছি এই তোর চোখের সামনেই। 

            আজ প্রায় সাত-আট বছর পর হঠাৎ দিল্লী এয়ারপোর্টে আদৃজা আর আদিলের দেখা। একে অপরকে দেখে বিশ্বাসই করতে পারছে না যে তারা একে অপরের মুখোমুখি হয়ে বসে আছে। তাদের পুনরায় যে দেখা হবে সেটা কখনোই কল্পনা করেনি তারা। অবশ্য এভাবে অবাক হওয়ার কারণও আছে। গত ৮ বছর দুজনে আলাদা জীবন কাটালেও ৮ বছর আগে একে অপরকে ছেড়ে এক মুহূর্তও থাকতে পারতো না তারা। একে অপরকে খুব ভালো বাসতো যে। বিয়েও করতে চেয়েছিলো তারা। সবকিছু ঠিক ও হয়ে যায়। কিনতু একটি সম্পর্ক তৈরী করাটা যতটা সহজ, সেটা সামলে চলাটা ততটাই কঠিন। 

              সেদিনটা ছিল আদৃজা এবং আদিলের বিয়ের ঠিক আগের দিন। দুজনেই খুব খুশি ছিল, আদৃজা হাতের মেহেন্দির দিকে বারবার তাকাচ্ছিলো আর মনে মনে হাসছিল। আর কয়েক মুহূর্তের অপেক্ষা। তারপর একে অপরের কাছে আসতে আর কোনো বাধা থাকবে না দুজনের। আদৃজা নিজের হাতের মেহেন্দিটা দেখাবে বলে কল করল আদিলকে। কিন্তু এতো রাতে আদিলের ফোন ব্যাস্ত? কোথায় ব্যাস্ত আদিল? টানা ১৫ মিনিট আদৃজার কল ওয়েটিং থাকার পরও আদিলের কোনো উত্তর নেই। এসব ভাবতে ভাবতে আদৃজার মনে একটা সন্দেহের কাঁটা বিঁধতে লাগল। সাথে সাথে রাগটাও বাড়তে শুরু করে। ৩০ মিনিট ব্যাস্ত থাকার পর আদিল কলব্যাক করলো। 

—হ্যালো.. 
—হ্যালো মানে!! কোথায় ব্যস্ত ছিলিস এতো রাতে? কার সাথে ব্যস্ত ছিলিস? 

প্রচন্ড রেগে গিয়ে একটানা প্রশ্ন করতে শুরু করে দিলো আদৃজা। প্রশ্নগুলো শুনছে ঠিকই কিন্তু উত্তর দেওয়ার কোনো সুযোগ পাচ্ছে না আদিল। আর যখন নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার সুযোগ আসলো তখন আর সেটা আদৃজার কাছে বিশ্বাসযোগ্য হল না। 

— "আগে থেকেই তোর উপর সন্দেহ ছিল। এখন আমি নিশ্চিত, তাই আমাদের বিয়ে ভুলে যা। যদি সত্যিই আমাকে ভালোবেসে থাকিস তাহলে বাড়িতে বলে দিস যে এই বিয়ে করছিস না। যদি আসিস তাহলে আমার মরা মুখ দেখবি।" 

শেষ কথাটা বলেই কলটা কেটে দিয়েছিলো আদৃজা। এরকম একটা ছোট্ট কথার জন্য সম্পর্ক নষ্ট? এটা সম্ভব? আদিল জানে আদৃজা কথায় কথায় খুব রেগে যায়। কিন্তু সেই রাগের জন্য কী বিয়ে ভাঙা যায়? আদিল বুঝতে পারলো না কি করবে। অনেকবার কল করার চেষ্টা করল আদৃজাকে। কিন্তু প্রতিবারই ওর কলটা কেটে দিচ্ছিল আদৃজা। এরকম কিছুক্ষণ চলার পর একটি মেসেজ এলো, অদৃজার। তাতে লেখা ছিল, "আর কোনোদিন যোগাযোগ করবিনা, তাহলে আমাকে আর কেউই দেখতে পাবে না কোনোদিনও।" 

           এরপর আদিলের আর সাহস হলো না আদৃজাকে যোগাযোগ করার। কারণ সে জানতো আদৃজা সেটা করে যেটা সে বলে। কিনতু এত সহজে তাদের সম্পর্কের ভাঙ্গন মেনে নিতে পারলো না আদিল। যদি আদৃজা একবার শুনতো ওর কথা, যদি আদৃজা একবার ওকে বিশ্বাস করত যে বিয়ের আগের রাতে নেহাতই ওর কিছু বন্ধুদের সাথে হাসি-মজা করছিল... এরকম অনেক যদি-র নিচে চাপা পড়ে গেছিল ওর মনের কান্না। কিনতু সেই মুহূর্তে সুইসাইডের হুমকি দেওয়া একগুঁয়ে আদৃজার থেকে দূরে চলে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না আদিলের কাছে। এরপর আদিল পুরোপুরি ভেঙে পড়ে, আর থাকতে চায়নি এখানে। পুরোনো স্মৃতি ভুলতে কিছুদিনের মধ্যেই রওনা হলো আমেরিকা। আদিল আগেই ওখানে জব অফার পেয়েছিলো। কথা ছিলো বিয়ের পর আদৃজাকে নিয়েই বিদেশ পাড়ি দেবে, কিনতু তখন আদৃজাকে ভুলে থাকতে দেশ ছেড়েছিল। 

একটা বাচ্চার আওয়াজে চমক ভাঙল আদিলের। জিজ্ঞাসা করল, "কোথা থেকে ফিরছিস?" 

— আমি তো দিল্লি থেকেই কলকাতা যাচ্ছি। তুই ? 
— যেখানে গিয়েছিলাম সব ছেড়ে সেখান থেকে ফিরছি, আমেরিকা থেকে। আজ ৮ বছর পর। দিল্লিতে নেমে আবার কলকাতার ফ্লাইট। কিন্তু এই পুচকেটা কে? 
— আমার ছেলে দুদিন পর ওর জন্মদিন, তাই কলকাতা ফিরছি। 
— তার মানে তুই দিল্লীতেই থাকিস? তা তোর হাজব্যান্ড কোথায়? 
আদৃজা কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইল। 
— কী হলো? চুপ করে গেলি যে!! 

আদৃজা তবু চুপ করেই রইল। শুধু আদিল দেখল আদৃজার চোখের কোণ বেয়ে জল পড়তে লাগল। তারপর খেয়াল করলো আদৃজার হাতে শাখা-নোয়া বা মাথায় সিঁদুর নেই। 

"মানে ........" কিছু বলতেই যাচ্ছিল আদিল। হঠাৎ ওকে থামিয়ে আদৃজা বলে উঠল, 

— আমাদের সম্পর্কটা ভেঙে যাওয়ার পর তুই চলে যাস। তার কিছুদিন পর আমি খুঁজেছিলাম তোকে কিন্তু ততদিনে তুই চলে গেছিস। কোথায় গেছিস তোর বাড়ির কেউ বলেনি আমাকে। তারপর বাড়ি থেকে বিয়ে দিয়ে দেয় দিল্লির একজন ব্যাবসায়ীর সাথে। বছর দুই আগে একটি কার একসিডেন্টে মারা যায় আমার হাজব্যান্ড। তারপর থেকে ব্যবসা, সংসার,ছেলে সব আমাকেই সামলাতে হয়। 

— আমার আদৃজার ওপর দিয়ে যে এত ঝড় বয়ে গেছে সেটা ভাবতেও পারছি না। যেমন সেদিন ওরকম একটা ছোট্ট কারণে আমাদের সম্পর্কটাকে ভেঙে ফেলবি সেটাও কখনো কল্পনা করিনি। সেদিন আমি ফোনে ব্যাস্ত ছিলাম ঠিকই, কিনতু আমার এক বন্ধু নিজেদের মধ্যে সামান্য ঝগড়া নিয়ে সুসাইড করতে যাচ্ছিল। সেই মুহূর্তে ওকে বোঝানোটাই সবচেয়ে বেশি গুরুতূপূর্ণ বলে মনে হয়েছিল আমার। তখন মনে মনে নিজেকে খুব লাকি মনে হচ্ছিল আমার, যে আমাদের মধ্যে ঝগড়া হলেও আমরা মানিয়ে নিতে পারি। কারণ আমার কাছে তুই আছিস। কিন্তু তুই তো আমাকে কিছু বলার সুযোগই দিলি না। একবার ভাবলিও না যে এভাবে সম্পর্ক ভাঙ্গলে আমার কী হবে। 

— তোকে বলার সুযোগ দিলেও সম্পর্কটা আমাদের ভাঙতোই রে। আর তখন যে আমি নিজেকে.... 

— মানে ? 

"প্লিজ গিভ ইওর কাইন্ড অ্যাটেনশন, ফ্লাইট উইল ল্যান্ড উইদিন ফাইভ মিনিটস, কাইন্ডলি চেক ইওর সিটবেল্ট" 

— মনে, আমার নাম আদৃজা মুখার্জী আর তোর নাম মোহাম্মদ আদিল শেখ। আমার বাড়িতে একটানা অস্বীকার করার পর হঠাৎ আমাদের সম্পর্কটা সবাই মেনে নিয়েছিল ভালোভাবেই। তাতে একটু অবাক হয়েছিলাম প্রথমে কিন্তু পরে ভেবেছিলাম সত্যিই মেনে নিয়েছে। তখন তো বুঝিনি তোকে মেনে নেওয়ার উদ্দেশ্যে ছিল তোকে খুন করা আর তোর নামে মিথ্যে বদনাম দিয়ে আমার মন থেকে তোকে সরিয়ে ফেলা। 

আদিল বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে রয়েছে আদৃজার দিকে। আদৃজা বলে চলেছে, "সেদিন হাতে মেহেন্দি লাগিয়ে খুব খুশি ছিলাম আমি। দৌড়ে ছাদে যাচ্ছিলাম তোকে মেহেন্দির ছবি দেখাবো বলে। হঠাৎ বাবার ঘর থেকে কয়েকজনের চাপা কথার আওয়াজ শুনতে পেলাম। কোনো প্রবলেম হয়েছে ভেবে ঘরে ঢুকতে গিয়ে বুঝলাম দরজা বন্ধ। তখনই সব শুনেছিলাম। তখনই তোকে কল করছিলাম। কিনতু তুই ব্যস্ত ছিলিস। আর সেই সুযোগটাকেই আমি কাজে লাগালাম। কারণ সত্যি কথা বললেও হয়ত তুই আমাকেবিয়ে করতে চলেই আসতিস। ভেবেছিলাম কিছুদিন পর বাড়ি থেকে লুকিয়ে তোর কাছে যাব। কিনতু ততদিনে তো তুই চলে গেছিস। 

          আদিল তখন পুরোপুরি বিধ্বস্ত। সেদিনের পর থেকে ও আদৃজার ওপর কত রাগ করেছে, বিরক্ত হয়েছে। শেষের দিকে নিজের সমস্ত দুঃখের জন্য আদৃজাকেই দায়ী করেছে আর ওকে অ্যাভয়েড করে ভুলতে চেয়েছে। আজকে দুজনের দেখা হওয়ার একটু আগে অবধি আদিল ভাবত আদৃজা ওর লাইফটা শেষ করে দিয়েছে। কিনতু আদৃজা তো ওকে পুরো জীবনটাই দান করে গেল। এতদিন ও শুধু নিজের পাওয়া-না পাওয়ার হিসেব কষত। কিনতু আজ জানলো আদৃজা পুরোটাই ওকে দিয়ে গেছে, বদলে চায়নি কিছুই। 

— এক্সকিউজ মি স্যার ...ফ্লাইট ল্যান্ড করে গেছে। 

এয়ার হোস্টেসের ডাক শুনে ঘোর কাটল আদিলের। দেখলো পাশে আদৃজা নেই... সবাই বেরিয়ে গেছে। দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে এসে ডাকল, "আদৃজাআআ....!!!" আদৃজা ফিরে তাকিয়ে মৃদু হাসতে হাসতে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানালো আদিলকে। আদিলও দূর থেকে হাত নেড়ে বিদায় জানালো। এখন আর ওর মনে কোনো খারাপ লাগা নেই। কারণ ও জানে আদৃজাকে জীবনে না পেলেও আদৃজার অদৃশ্য ভালোবাসা ওকে আজও আগলে রেখেছে।


                                                ©  মনোজ রায় ©

" তনুশ্রী " - এম.কবির


         পুরুত মশাই মন্ত্র পাঠ করছেন। তনুশ্রী কনে সেজে বসে আছে। এইবার উঠতে হবে, সাত পাক ঘুরতে হবে তাকে। কার সাথে- যাকে সে চেনেনা, যাকে সে বোঝেনা। কি ভাগ্যের পরিহাস, তাই না? আর যাকে চেনে, বোঝে সে একটু দূরে পিছন থেকে করুণ নয়নে চেয়ে চেয়ে তাকাচ্ছে, হাসছে, কাঁদছে, লুকিয়ে লুকিয়ে চোখের জল মুচছে। হা হা হা। অরুণ তেমন হ্যান্ডস্যাম নয়, ছিমছাম চেহেরার একটা ছেলে। আজ তার উপর প্রচুর দায়িত্ব। মেসোমশায় মানে তনুর বাবা তাকে এই বিয়ের সব দায়িত্ব দিয়েছে না!! বাড়ীর বড়রা সবাই ফুল ছিটাচ্ছে,পুরুত মশাই মন্ত্র পাঠ করছেন। অরুণের কানে আজ মন্ত্রগুলো যেন বিঁধছে। উলুর আওয়াজ তার বুকে আঘাত দিচ্ছে যেন। তনু মানে ওই তনুশ্রী এক পা দু পা করে পাক দিচ্ছে। মন চায়না, পা দুটো যেন জোড়হাত করছে, কাকুতি-মিনতি করছে। তনু কাঁদছে। সবার চোখে তার এই কান্না হয়ত বাপের বাড়ি ছাড়ার কান্না। কিন্তু জানে শুধু দুজনা। তারা... হ্যা শুধু তারা।



                                                © এম.কবির ©

"আশীর্বাদী" - সুফি রায়





— তোমার আমাকে কিছু বোঝাতে হবে না বৌদি। আমার স্বামীকে আমি চিনি। 
— কোনো মেয়ে নিজের সম্মানহানির কথা বানিয়ে বলে না শর্বরী। 
— আমার দাদা নেই বলে বেলেল্লাপানা করতে শুরু করে দিয়েছ?? ছি ছি!! কিনতু তোমার মত এমন কুহকিনী মেয়েমানুষ বললেই তো আর আমার এমন দেবতার মত স্বামীর চরিত্রে কলঙ্ক লেগে যাবে না!! 
— আমারই ভুল ছিল শর্বরী, ক্ষমা করো। পাপ তো জীবনে অনেক করেছি, তার শাস্তিই হয়ত পাচ্ছি। কিনতু জীবনে যদি কোনো পুণ্য করে থাকি, তবে আমার সমস্ত পুণ্য একত্র করে তোমাকে আশীর্বাদ করছি... তোমার ছেলেও যেন বড়ো হয়ে ওর বাবার মতো হয়।


                                                               
                                                    © সুফি রায় ©

"রাজপুত্তুর ও রাধিকা" - সঙ্ঘমিত্রা প্রামাণিক চ্যাটার্জ্জী



রাজপুত্তুর, দূরের থেকেই দেখবি রাধিকাকে?
রাধিকা যে হৃদমাঝারে তোর সঙ্গেই থাকে।
আলতো করে আঙুল ছুঁবি আপাদমস্তক?
আমার পাতা লুকিয়ে দেখিস? তুই দুষ্টু লোক।
সোজা কথা হারিয়ে গেছে ধরেছি কবিতা ছুতো।
তোকে দেখে আগের মতোই ভীষণই আপ্লুত।



  © সঙ্ঘমিত্রা প্রামাণিক চ্যাটার্জ্জী ©

"উত্তরণ" - শিল্পী মণ্ডল



বছর শেষে বছর আসে নতুন আলোর সাজে,
আবার শুরু হিসাব কষা চাওয়া পাওয়ার মাঝে।
কি হারালাম, কি বা পেলাম অংক মেলা ভার,
রঙিন স্বপ্ন সাজিয়ে দেব জীবন তরী পার।
নতুন আশায় সঞ্চারিত করব আবার প্রাণ,
নতুন সুরে বাঁধব আবার জীবনপুরের গান॥



                   © শিল্পী মণ্ডল ©

"কবিতার অপেক্ষায়" - রণবীর বন্দ্যোপাধ্যায়

তোমার সাথে যখন বলি একটুখানি কথা
কবিতা আসে, কোথা থেকে আসে ভাষাগুলো—
ভাষারাই শুধু জানে আমার ভাষার মানে,
কে যেন উঁকি দেয়, তোমারই মতো করে
মনে আচমকা, দমকা হাওয়া উত্তর কোণ
থেকে শিরশির করা পরশ আনে— কবিতার॥

এখন কার্তিকের হিমেল রাত—
তোমার উষ্ণতা কবিতায় স্পর্শ করে
আমার শরীর; অমাবস্যার আকাশ
সঙ্গী, কবিতা নিয়ে একা অন্ধকারে ;
এখন ঝিরঝিরে হাওয়া উত্তরের,
আর নিঃশব্দ শব্দের সপ্রেম উচ্চারণ—
সৃষ্টি কবিতার আমার অদ্ভূত নিস্তব্ধতায়,
অন্তহীন প্রতীক্ষার অবসান কবিতায়॥                                                                    
     © রণবীর বন্দ্যোপাধ্যায় ©