সোমবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

" আন্তরিকতা টুকুই আছে " - সঙ্ঘমিত্রা প্রামাণিক চ্যাটার্জ্জী


আমার ঘরে আসবে তুমি?
অট্টালিকা নয়গো আমার
না আছে আমার মস্ত বাড়ি
নাহ্!! তাও নেই ঘোড়া গাড়ি।
না আছে ভাই এ.সি র হাওয়া
হোম থেয়েটারও নেই ভেতরে
ওসব আমার কিচ্ছুটি নেই
এর পরেও আসবে ঘরে?
আসতে যখন চাইছো এতো
অবশ্যই আসতে পারো
কার কী আছে বুলির পাহাড়
শোনার সাধ নেই আমারও।
আমারও আছে অনেক কিছু,
কবিতা আছে ঝুড়ি ঝুড়ি।
শোনার যদি সাধ হয়তো—-
বললে, আমি শোনাতে পারি।
ঐশ্বর্যের বাহারও নেই
দাস-দাসীও নেই একটিও ভাই
নিজের হাতে রান্না খাবার যত্ন করে তাই দিতে চাই।
যদি না তা ভালো লাগে তবে তুমি দূরেই থেকো
আন্তরিকতাই চাইলে শুধু আমার ঘরে তুমি এসো।

     © সঙ্ঘমিত্রা প্রামাণিক চ্যাটার্জ্জী 

" রোমন্থন " - অমিত


তোমার জন্য আকাশের চিল
মাটিতে এসেছে নেমে
একঝাঁক কাক রাজপথে বসে
চলাচল গেছে থেমে,
তুমি হাঁটতেই ভরা রোদ্দুরে
রামধনু ফুটে গেল...
ইতিউতি ওড়া একাকী শালিখ
সঙ্গিনী খুঁজে পেল।

তুমি ছিলে তাই হাল্কা বৃষ্টি
লাজুক হাওয়ার মাঝে,
এফ.এম বেতারে কৈশোরে
শোনা হারানো গানটি বাজে।
তোমার জন্য কুয়াশা-বিকেল
মোমবাতি জ্বলা রাত,
তুমি দাঁড়াতেই বন্যার জল
আটকে দিয়েছে বাঁধ!

তুমি ছিলে তাই বনানীর কুঁড়ি
ফুল হয়ে ফুটেছিলো,
গ্রহণেরও রাতে একফালি চাঁদ
জোছনা ছড়িয়ে দিলো,
তোমার জন্য বিদেশী নাবিক
মাতাল হওয়ার আগে,
ময়ূরপঙ্খী নাও ভাসালো গো
সাঁঝের অস্তরাগে।

তুমি আছো বলে মাঝদরিয়ায়
এখনো জাহাজ চলে,
স্তব্ধতাগুলো কাব্যিক হয়
নির্মম কোলাহলে।

তোমার জন্য বদ্ধহৃদয়
গোপন রক্তক্ষরণ...
তোমারি জন্য তীব্র আকুতি
সতত রোমন্থন!


© অমিত ©

" তোমার সঙ্গে, তোমার জন্যে " - রণবীর বন্দ্যোপাধ্যায়


আকাশে ছড়িয়ে দিয়েছি রঙ লাল,
তোমার জন্য।
পথে ছড়ানো কৃষ্ণচূড়ার হলুদ,
তোমার জন্যে।
শান্ত হয়ে আসছে পাখিদের কলরব—
বসবো এখন তোমার পাশে অনেকক্ষণ
তোমারই জন্য।

ভেবে এসেছিলাম—
শোনাবো সদ্য লেখা কবিতাটা—
দেখছিলাম কিন্তু -
লাল লিপস্টিক মাখা ঠোঁটে তোমার,
জলন্ত সিগারেট
দারুণ মেকআপ করা গালের নিচে।

কবিতার শব্দগুলো ভাষা পেল—
সিগারেটের ধোঁয়ায় মিশে গেল॥

প্রাণটা থাকলো না,
থাকলো কবিতার খাতা
কালো অক্ষর ভরা,
পড়লো কিছু ছাই
খাতার পাতায় আর—
তোমার উচ্চকিত হাসি,
তোমার লাল লিপস্টিক
রক্তিম করলো আমার শরীর॥

শেয়ারের দামের ওঠানামা,
মিউচুয়াল ফান্ডের হিসেব
আর মেডিক্যাল ইন্সুরেন্স,
কবিতা লিখে গেল
আমার খাতার পাতায়।

আকাশ এখনো হয় লাল,
কৃষ্ণচূড়া হলুদ এখনও ;
অনেকক্ষণ এখন—
হুইস্কি আর সিগারেট নিয়ে
তোমারই জন্য
তোমার সঙ্গে বসি॥


                © রণবীর বন্দ্যোপাধ্যায় ©

"রাতের নীরবতা ভঙ্গ" - সানন্দা নন্দী


গভীর রাতে ঘুম ভাঙে বৃষ্টির শব্দে
রাতের নীরবতা ভঙ্গ হয় সেই শব্দে ,
শুনসান জন-মানবহীন রাস্তা বড় একাকিনী
রাস্তার ধারে সাজানো ল্যাম্পপোস্ট গুলি তার সাথী ।
হলুদ আলোতে আঁধার ঘোচাতে সে তৎপর
নেই কোনো ব্যস্ততা নেই কোনো ভীড়-ভাট্টা ,
ব্যস্ততা শুধু রাস্তার সারমেয়দের
উদ্দেশ্য তৎক্ষণাৎ নিরাপদ আশ্রয়ের।
পর্দাকে উপেক্ষা করে হলুদ আলো ঘরে ঠিকরে এসে পড়ে
গভীর রাতের অতিথিকে করি সাদরে আহ্বান ,
আলহাদে সে ছড়িয়ে পড়ে ঘরের চারদিকে
মিটি মিটি আলোতে বশীভূত আমি -
খানিকটা ইচ্ছাকৃতও বটে ।
বৃষ্টির ঝম ঝম শব্দ হাতছানি দিয়ে ডাকে
আর ঠান্ডা-শীতল বাতাস ভিজতে আশকারা দেয় ,
আলস্যের চাদর আর ঘুমন্ত বালিশকে সরিয়ে -
গুটি গুটি পায়ে চলে যাই একচিলতে ব্যালকনিতে ।
দু'হাত পাতি আকাশের নিচে
চাতকের মতো তৃষিত হৃদয় নিয়ে ,
ব্যস্ত হয়ে পড়ি গভীর রাতের জলকেলিতে
লিপ্ত থাকি বৃষ্টিকে মুঠো বন্দীর ব্যর্থ প্রয়াসে ।
ধীরে ধীরে আঁধারের কালিমা ঘুচতে থাকে
পূবের আকাশ ক্রমে ক্রমে ফর্সা হতে থাকে ,
রাস্তার হলুদ আলো ফিকে হয়ে আসে
বৃষ্টি তখনো ঝরছে অবিরত নিজ ছন্দে ,
চোখ-জোড়া বন্ধ করে নিঃশ্চুপ থাকি
বড় আন্তরিকতার সাথে আলিঙ্গন করি -
বৃষ্টির শীতল জলের ঝাপটাকে ।
             


                    *স্বত্ব নিজস্ব
             @ সানন্দা নন্দী






" বৈষ্ণব কবিতা " - সুফি রায়






আজি ঝরঝর মুখর         বাদল খরশর....
       শ্যাম বিনা আঁখি নাহি চায়।
মেঘ গরজিছে,        মত্ত দাদুরী ডাকিছে
          মোর পরাণ উথলি যায়॥
ওই সেথা দূরে          কুঞ্জ-বাসরে
        শ্যাম বুঝি বসি আছে।
তার বাঁশি শুনি,       হৃদয়ে প্রমাদ গণি
        যায় সে আন বাড়ি পাছে॥
চল চল চল           মোরে নিয়া চল
       আর যে সহিতে নাহি পাই।
ওরে ওরে বড়াঞি         সখী হে হামারি
          কানুরে দেখি সব ঠাঁই॥
ওই যে যমুনাকুলে        দেখহ কদম-মূলে
         কেন সে আমারে ছলি।
ওই সে বসি        কালো মেঘে ভাসি
       যায় সে কার ঘরে চলি॥
ওই দেখা যায়          ধেণু সে চড়ায়
            মোহন বাঁশি পুরিয়া।
দেখ দেখ সখী         ময়ূর-পুচ্ছ ধরি
          কেমনে ভুলায় নাচিয়া॥
অঙ্গে পীত বসন     রঙ্গে নাগিনি যেমন
           হেলিয়া দুলিয়া মন ভায়।
ও কালো বরণ       ডাকিল আমার মরণ
          এবে কি করিনু হায় হায়॥
মাথায় কবরী বাঁধি       কর্ণে কুণ্ডল গাঁথি
        বাজুবন্ধ আর রতনে সাজি।
ওই মুকুতা-দশন,              রূপ অবর্ণন
              হাম কলঙ্ক নিতে রাজি॥
শেষে কবি ভণে                এ অসম রণে
            কে কবে জিতিয়াছে আর।
কালা যে পিরীতি-নাগ       রাধারে পাইলে বাগ
           দংশিয়া করিবে ছাড়খার॥



                                                                                     © সুফী রায় 

শুক্রবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

"ফাঁকির ফাঁদে" - সানন্দা নন্দী


মধ্য রাতে ঘুম তাড়াতে
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে
পড়তে যখন বসি
সত্যি বলছি পড়াতে তখন
মন লাগতে আর কি আমি পারি ?
চোখের পাতা বেজায় ভার
বিরাট হাই তুলি তাই
এদিক-ওদিক খালি তাকাই
চোখ দু'খানি খুঁজে বেড়ায়
মা জানি কোথায় ?
বাবার ভয়ে জোরটি করে
পড়তে বসি অনিচ্ছাতে
মন যে টানে ঘুমের দেশে
কি করি এখন উপায় ?
পরীক্ষা যে দু'দিন বাদে
দিয়েছি ফাঁকি চরম ভাবে
বুঝছি এখন হাড়ে-হাড়ে
পড়েছি আমি ফাঁকির ফাঁদে
পালাবার পথ বন্ধ প্রায়
আর যে নেই কোনো উপায়
বাধ্য হয়ে লক্ষী মতো
পড়ছি তাই পড়া গুলো
ভাইটি আমার রাখছে নজর
দিলেই ফাঁকি করবে নালিশ
ভগবান জানেন কটা পাবে বালিশ ?
বেতখানা তাই রাখাই আছে
বাবার মাথার পাশখানিতে
ঠাকুর ঠাকুর উতরে গেলে
রক্ষে পাবো কোনো মতে
আর দেবো না ফাঁকি মা গো
পাশ করিয়ে দাও কোনো মতে
দেব প্যারা পূজোর থালায়
কথা দিলাম শেষ বেলায় ।



                          ( স্বত্ব নিজস্ব )
                         ©  সানন্দা নন্দী

" পুনর্মিলনের দাবী " - সানন্দা নন্দী



আমার রূপে তুমি ছিলে মুগ্ধ
আমার গুণে মুগ্ধ ছিল তোমার স্বজন,
দেনা-পাওনার হিসেবটা মিটে যেতেই
ঠিক হলো শুভ দৃষ্টির দিনক্ষণ।
চার হাত এক হলো শুভ লগ্নে
শুধু এক হলো না তোমার আমার চিন্তা-ধারা,
মেয়েদের মানিয়ে নিতে হয়-
এটাই যে সংসারের চরম বাস্তব।
ভালোবাসা দিয়েছিলে ঠিকই-
কিন্তু তাতে খাদ ছিল কিঞ্চিৎ,
ক্রমে ক্রমে রূপের মোহ কাটিয়ে
অবহেলা-অবজ্ঞা জায়গা করে নিল তোমার মনেতে-
চরম লাঞ্ছনাময় সে জীবন।
পিছুটান যেটা জন্মেছিল
সেটা তোমার প্রতি তীব্র ভালোবাসা আর অন্ধ বিশ্বাস,
উপহাস করে তুমি বলতে-
মিছে আমার ভালোবাসা
সবই নাকি বন্দী ঐ মানি-ব্যাগের নোটে !
অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতাম তোমার দিকে।
মানিয়ে নিতে নিতে কোণ ঠাসা - বড়ো ক্লান্ত
তীব্র যন্ত্রনাময় এ জীবন
অথচ প্রতিশ্রুতি ছিল সুস্থ স্বাভাবিক জীবনের
নিজ হাতে ভঙ্গ করলে সে প্রতিশ্রুতি
ভাবলে না সম্পর্কের ভবিষ্যৎ ।
সব কিছুকে উপেক্ষা করে চলে এলাম বাবার কাছে
তুমি খোঁজ টুকুও নিলে না
নিজেকে সামিল করলে অন্য জীবলে -
বড়ো বিশৃঙ্খল সে জীবন
হারিয়ে ফেললে নিজ সত্তা নিজের অজান্তে ।
লোক মারফৎ বার্তা পাঠালে মুক্তির
চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে নিঃশ্চুপ তোমার স্বজন
নিরুপায় আমি - নিরুপায় আমার স্বজন
তাই দ্বারস্থ আজ আদালতের -
দাবী সম্পর্কের পুনর্মিলনের ।
আইনের ধারাতে স্বজ্ঞানে বন্দী দু'জনে
লড়াইটা চলছে সমানে - সমানে
মাঝে সাজে দেখা হয় বিপরীত বেঞ্চে
তুমি ব্যস্ত ভাঙনে -
আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ নব গড়নে।
বছরের পর বছর চলছে যে লড়াই
জানি না কার হবে হার - কারই বা জিৎ ?
তবু প্রত্যাশায় থাকি তোমার ফেরার -
আমাদের সম্পর্কের পুনর্মিলনের ।



                        ( স্বত্ব নিজস্ব )
                     ©  সানন্দা নন্দী