মঙ্গলবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৮

" নীরব আলো " নভেম্বর ২০১৮ - PDF ডাউনলোড




নীরব আলো -  নভেম্বর ২০১৮ " - একটি ছোট্ট এবং সম্পূর্ণ স্বাধীন প্রচেষ্টা আপনাদের মনোভাব সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার | আপনাদের মধ্য থেকেই  লিখিত সংগ্রহকে এই পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশিত করা হয় প্রতি মাসে |

পত্রিকাটি কোন রকম ব্যবসায়ীক ক্ষেত্রে ব্যবহিত করার জন্য নয় | এটি একটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যের মাসিক ই-পত্রিকা |

" নীরব আলো "নভেম্বর  ২০১৮ সংখ্যা প্রকাশিত হল আপনাদের জন্য  |  ডাউনলোড করুন ,পড়ুন ,আনন্দ উপভোগ করুন এবং এর সাথে নিচে কমেন্ট বাক্স এ আপনাদের মতামত ,অভিযোগ অবসায় জানাবেন  | আপনাদের মতামত নতুন লেখক লেখিকাদের আরো উৎসাহিত করবে  |

আপনারা সকলেই আমাদের মাসিক ই-পত্রিকাটি PDF ফাইল ফরম্যাট এ ডাউনলোড করতে পারবেন নিচের লিঙ্ক টিতে ক্লিক করে  | "ডাউনলোড" বোতামটিতে ক্লিক করলেই ডাউনলোড শুরু হয়ে যাবে | ধন্যবাদ


সোমবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৮

" পৃথক দুর্গা " | সানন্দা নন্দী


তোমার দুর্গা মাটির প্রলেপে নিখুঁত তৈরি প্রাণহীন মূর্তি
আমার দুর্গা অনুভূতি পূর্ণ রক্ত-মাংসে গড়া জ্যান্ত মানুষ রূপিণী
তোমার দুর্গার প্রতি বছর আশ্বিন মাসে ধুমধামে মর্ত্যে আগমন
আমার দুর্গা এখনো অবাঞ্ছিত তাই মাতৃ গর্ভেই মৃত্যু বরণ
তোমার দুর্গা বেনারসী শাড়ী ও অলঙ্কারে সুসজ্জিতা
আমার দুর্গা ছেঁড়া বসনে কোনো ক্রমে লজ্জা নিবারণী
তোমার দুর্গার কুঞ্চিত সুবিন্যস্ত কেশরাশি
আমার দুর্গার তেলহীন অবিন্যস্ত রুক্ষ কেশরাশি
তোমার দুর্গা জগৎ জননী মহিষাসুর মর্দিনী
হায় ! আমার দুর্গা এখনো যে ধর্ষকের যৌন শিকার
তোমার দুর্গার অর্ঘ্যর তরে ব্যয় হয় রাজকোষ
হায় ! আমার দুর্গা মেধাবী হয়েও অর্থাভাবে মধ্য শিক্ষায় সমাপ্ত
তোমার দুর্গার ভরা সুখের সংসার স্বামী সন্তান নিয়ে
আমার দুর্গা পরে থাকে পিত্রালয়ে যৌতুকের অভাবে
তোমার দুর্গা সাগর পাড়ি দেয় পূজিত হবেন বলে
আমার দুর্গা আজো পতিতা হয় দারিদ্রতা ঘোচাতে
তোমার দুর্গা পূজিত হন ভক্তি ভরা মন নিয়ে
আমার দুর্গার দৈন্যদশা লাঞ্ছিত হয় প্রতি পদে
তোমার দুর্গা মণ্ডপে দাঁড়ায়ে সার্থক মনোরঞ্জিনী
হায় ! আমার দুর্গা শ্রম-ভালোবাসা দিয়েও ব্যর্থ মনোরঞ্জিনী
দশমীতে তোমার দুর্গা বিদায় নেন মিষ্টি মুখে সিঁদুর খেলা আর বরণের শেষে
আর আমার দুর্গা চির বিদায় নেয় অত্যাচারে অগ্নিদগ্ধা কিংবা অন্য উপায়ে ।।




স্বত্ব সংরক্ষিত

©  সানন্দা নন্দী

সোমবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৮

" নীরব আলো " অক্টোবর ২০১৮ - PDF ডাউনলোড




নীরব আলো -  অক্টোবর ২০১৮ " - একটি ছোট্ট এবং সম্পূর্ণ স্বাধীন প্রচেষ্টা আপনাদের মনোভাব সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার | আপনাদের মধ্য থেকেই  লিখিত সংগ্রহকে এই পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশিত করা হয় প্রতি মাসে |

পত্রিকাটি কোন রকম ব্যবসায়ীক ক্ষেত্রে ব্যবহিত করার জন্য নয় | এটি একটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যের মাসিক ই-পত্রিকা |

" নীরব আলো "অক্টোবর ২০১৮ সংখ্যা প্রকাশিত হল আপনাদের জন্য  |  ডাউনলোড করুন ,পড়ুন ,আনন্দ উপভোগ করুন এবং এর সাথে নিচে কমেন্ট বাক্স এ আপনাদের মতামত ,অভিযোগ অবসায় জানাবেন  | আপনাদের মতামত নতুন লেখক লেখিকাদের আরো উৎসাহিত করবে  |

আপনারা সকলেই আমাদের মাসিক ই-পত্রিকাটি PDF ফাইল ফরম্যাট এ ডাউনলোড করতে পারবেন নিচের লিঙ্ক টিতে ক্লিক করে  | "ডাউনলোড" বোতামটিতে ক্লিক করলেই ডাউনলোড শুরু হয়ে যাবে | ধন্যবাদ


সোমবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

" আন্তরিকতা টুকুই আছে " - সঙ্ঘমিত্রা প্রামাণিক চ্যাটার্জ্জী


আমার ঘরে আসবে তুমি?
অট্টালিকা নয়গো আমার
না আছে আমার মস্ত বাড়ি
নাহ্!! তাও নেই ঘোড়া গাড়ি।
না আছে ভাই এ.সি র হাওয়া
হোম থেয়েটারও নেই ভেতরে
ওসব আমার কিচ্ছুটি নেই
এর পরেও আসবে ঘরে?
আসতে যখন চাইছো এতো
অবশ্যই আসতে পারো
কার কী আছে বুলির পাহাড়
শোনার সাধ নেই আমারও।
আমারও আছে অনেক কিছু,
কবিতা আছে ঝুড়ি ঝুড়ি।
শোনার যদি সাধ হয়তো—-
বললে, আমি শোনাতে পারি।
ঐশ্বর্যের বাহারও নেই
দাস-দাসীও নেই একটিও ভাই
নিজের হাতে রান্না খাবার যত্ন করে তাই দিতে চাই।
যদি না তা ভালো লাগে তবে তুমি দূরেই থেকো
আন্তরিকতাই চাইলে শুধু আমার ঘরে তুমি এসো।

     © সঙ্ঘমিত্রা প্রামাণিক চ্যাটার্জ্জী 

" রোমন্থন " - অমিত


তোমার জন্য আকাশের চিল
মাটিতে এসেছে নেমে
একঝাঁক কাক রাজপথে বসে
চলাচল গেছে থেমে,
তুমি হাঁটতেই ভরা রোদ্দুরে
রামধনু ফুটে গেল...
ইতিউতি ওড়া একাকী শালিখ
সঙ্গিনী খুঁজে পেল।

তুমি ছিলে তাই হাল্কা বৃষ্টি
লাজুক হাওয়ার মাঝে,
এফ.এম বেতারে কৈশোরে
শোনা হারানো গানটি বাজে।
তোমার জন্য কুয়াশা-বিকেল
মোমবাতি জ্বলা রাত,
তুমি দাঁড়াতেই বন্যার জল
আটকে দিয়েছে বাঁধ!

তুমি ছিলে তাই বনানীর কুঁড়ি
ফুল হয়ে ফুটেছিলো,
গ্রহণেরও রাতে একফালি চাঁদ
জোছনা ছড়িয়ে দিলো,
তোমার জন্য বিদেশী নাবিক
মাতাল হওয়ার আগে,
ময়ূরপঙ্খী নাও ভাসালো গো
সাঁঝের অস্তরাগে।

তুমি আছো বলে মাঝদরিয়ায়
এখনো জাহাজ চলে,
স্তব্ধতাগুলো কাব্যিক হয়
নির্মম কোলাহলে।

তোমার জন্য বদ্ধহৃদয়
গোপন রক্তক্ষরণ...
তোমারি জন্য তীব্র আকুতি
সতত রোমন্থন!


© অমিত ©

" তোমার সঙ্গে, তোমার জন্যে " - রণবীর বন্দ্যোপাধ্যায়


আকাশে ছড়িয়ে দিয়েছি রঙ লাল,
তোমার জন্য।
পথে ছড়ানো কৃষ্ণচূড়ার হলুদ,
তোমার জন্যে।
শান্ত হয়ে আসছে পাখিদের কলরব—
বসবো এখন তোমার পাশে অনেকক্ষণ
তোমারই জন্য।

ভেবে এসেছিলাম—
শোনাবো সদ্য লেখা কবিতাটা—
দেখছিলাম কিন্তু -
লাল লিপস্টিক মাখা ঠোঁটে তোমার,
জলন্ত সিগারেট
দারুণ মেকআপ করা গালের নিচে।

কবিতার শব্দগুলো ভাষা পেল—
সিগারেটের ধোঁয়ায় মিশে গেল॥

প্রাণটা থাকলো না,
থাকলো কবিতার খাতা
কালো অক্ষর ভরা,
পড়লো কিছু ছাই
খাতার পাতায় আর—
তোমার উচ্চকিত হাসি,
তোমার লাল লিপস্টিক
রক্তিম করলো আমার শরীর॥

শেয়ারের দামের ওঠানামা,
মিউচুয়াল ফান্ডের হিসেব
আর মেডিক্যাল ইন্সুরেন্স,
কবিতা লিখে গেল
আমার খাতার পাতায়।

আকাশ এখনো হয় লাল,
কৃষ্ণচূড়া হলুদ এখনও ;
অনেকক্ষণ এখন—
হুইস্কি আর সিগারেট নিয়ে
তোমারই জন্য
তোমার সঙ্গে বসি॥


                © রণবীর বন্দ্যোপাধ্যায় ©

"রাতের নীরবতা ভঙ্গ" - সানন্দা নন্দী


গভীর রাতে ঘুম ভাঙে বৃষ্টির শব্দে
রাতের নীরবতা ভঙ্গ হয় সেই শব্দে ,
শুনসান জন-মানবহীন রাস্তা বড় একাকিনী
রাস্তার ধারে সাজানো ল্যাম্পপোস্ট গুলি তার সাথী ।
হলুদ আলোতে আঁধার ঘোচাতে সে তৎপর
নেই কোনো ব্যস্ততা নেই কোনো ভীড়-ভাট্টা ,
ব্যস্ততা শুধু রাস্তার সারমেয়দের
উদ্দেশ্য তৎক্ষণাৎ নিরাপদ আশ্রয়ের।
পর্দাকে উপেক্ষা করে হলুদ আলো ঘরে ঠিকরে এসে পড়ে
গভীর রাতের অতিথিকে করি সাদরে আহ্বান ,
আলহাদে সে ছড়িয়ে পড়ে ঘরের চারদিকে
মিটি মিটি আলোতে বশীভূত আমি -
খানিকটা ইচ্ছাকৃতও বটে ।
বৃষ্টির ঝম ঝম শব্দ হাতছানি দিয়ে ডাকে
আর ঠান্ডা-শীতল বাতাস ভিজতে আশকারা দেয় ,
আলস্যের চাদর আর ঘুমন্ত বালিশকে সরিয়ে -
গুটি গুটি পায়ে চলে যাই একচিলতে ব্যালকনিতে ।
দু'হাত পাতি আকাশের নিচে
চাতকের মতো তৃষিত হৃদয় নিয়ে ,
ব্যস্ত হয়ে পড়ি গভীর রাতের জলকেলিতে
লিপ্ত থাকি বৃষ্টিকে মুঠো বন্দীর ব্যর্থ প্রয়াসে ।
ধীরে ধীরে আঁধারের কালিমা ঘুচতে থাকে
পূবের আকাশ ক্রমে ক্রমে ফর্সা হতে থাকে ,
রাস্তার হলুদ আলো ফিকে হয়ে আসে
বৃষ্টি তখনো ঝরছে অবিরত নিজ ছন্দে ,
চোখ-জোড়া বন্ধ করে নিঃশ্চুপ থাকি
বড় আন্তরিকতার সাথে আলিঙ্গন করি -
বৃষ্টির শীতল জলের ঝাপটাকে ।
             


                    *স্বত্ব নিজস্ব
             @ সানন্দা নন্দী






" বৈষ্ণব কবিতা " - সুফি রায়






আজি ঝরঝর মুখর         বাদল খরশর....
       শ্যাম বিনা আঁখি নাহি চায়।
মেঘ গরজিছে,        মত্ত দাদুরী ডাকিছে
          মোর পরাণ উথলি যায়॥
ওই সেথা দূরে          কুঞ্জ-বাসরে
        শ্যাম বুঝি বসি আছে।
তার বাঁশি শুনি,       হৃদয়ে প্রমাদ গণি
        যায় সে আন বাড়ি পাছে॥
চল চল চল           মোরে নিয়া চল
       আর যে সহিতে নাহি পাই।
ওরে ওরে বড়াঞি         সখী হে হামারি
          কানুরে দেখি সব ঠাঁই॥
ওই যে যমুনাকুলে        দেখহ কদম-মূলে
         কেন সে আমারে ছলি।
ওই সে বসি        কালো মেঘে ভাসি
       যায় সে কার ঘরে চলি॥
ওই দেখা যায়          ধেণু সে চড়ায়
            মোহন বাঁশি পুরিয়া।
দেখ দেখ সখী         ময়ূর-পুচ্ছ ধরি
          কেমনে ভুলায় নাচিয়া॥
অঙ্গে পীত বসন     রঙ্গে নাগিনি যেমন
           হেলিয়া দুলিয়া মন ভায়।
ও কালো বরণ       ডাকিল আমার মরণ
          এবে কি করিনু হায় হায়॥
মাথায় কবরী বাঁধি       কর্ণে কুণ্ডল গাঁথি
        বাজুবন্ধ আর রতনে সাজি।
ওই মুকুতা-দশন,              রূপ অবর্ণন
              হাম কলঙ্ক নিতে রাজি॥
শেষে কবি ভণে                এ অসম রণে
            কে কবে জিতিয়াছে আর।
কালা যে পিরীতি-নাগ       রাধারে পাইলে বাগ
           দংশিয়া করিবে ছাড়খার॥



                                                                                     © সুফী রায় 

শুক্রবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

"ফাঁকির ফাঁদে" - সানন্দা নন্দী


মধ্য রাতে ঘুম তাড়াতে
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে
পড়তে যখন বসি
সত্যি বলছি পড়াতে তখন
মন লাগতে আর কি আমি পারি ?
চোখের পাতা বেজায় ভার
বিরাট হাই তুলি তাই
এদিক-ওদিক খালি তাকাই
চোখ দু'খানি খুঁজে বেড়ায়
মা জানি কোথায় ?
বাবার ভয়ে জোরটি করে
পড়তে বসি অনিচ্ছাতে
মন যে টানে ঘুমের দেশে
কি করি এখন উপায় ?
পরীক্ষা যে দু'দিন বাদে
দিয়েছি ফাঁকি চরম ভাবে
বুঝছি এখন হাড়ে-হাড়ে
পড়েছি আমি ফাঁকির ফাঁদে
পালাবার পথ বন্ধ প্রায়
আর যে নেই কোনো উপায়
বাধ্য হয়ে লক্ষী মতো
পড়ছি তাই পড়া গুলো
ভাইটি আমার রাখছে নজর
দিলেই ফাঁকি করবে নালিশ
ভগবান জানেন কটা পাবে বালিশ ?
বেতখানা তাই রাখাই আছে
বাবার মাথার পাশখানিতে
ঠাকুর ঠাকুর উতরে গেলে
রক্ষে পাবো কোনো মতে
আর দেবো না ফাঁকি মা গো
পাশ করিয়ে দাও কোনো মতে
দেব প্যারা পূজোর থালায়
কথা দিলাম শেষ বেলায় ।



                          ( স্বত্ব নিজস্ব )
                         ©  সানন্দা নন্দী

" পুনর্মিলনের দাবী " - সানন্দা নন্দী



আমার রূপে তুমি ছিলে মুগ্ধ
আমার গুণে মুগ্ধ ছিল তোমার স্বজন,
দেনা-পাওনার হিসেবটা মিটে যেতেই
ঠিক হলো শুভ দৃষ্টির দিনক্ষণ।
চার হাত এক হলো শুভ লগ্নে
শুধু এক হলো না তোমার আমার চিন্তা-ধারা,
মেয়েদের মানিয়ে নিতে হয়-
এটাই যে সংসারের চরম বাস্তব।
ভালোবাসা দিয়েছিলে ঠিকই-
কিন্তু তাতে খাদ ছিল কিঞ্চিৎ,
ক্রমে ক্রমে রূপের মোহ কাটিয়ে
অবহেলা-অবজ্ঞা জায়গা করে নিল তোমার মনেতে-
চরম লাঞ্ছনাময় সে জীবন।
পিছুটান যেটা জন্মেছিল
সেটা তোমার প্রতি তীব্র ভালোবাসা আর অন্ধ বিশ্বাস,
উপহাস করে তুমি বলতে-
মিছে আমার ভালোবাসা
সবই নাকি বন্দী ঐ মানি-ব্যাগের নোটে !
অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতাম তোমার দিকে।
মানিয়ে নিতে নিতে কোণ ঠাসা - বড়ো ক্লান্ত
তীব্র যন্ত্রনাময় এ জীবন
অথচ প্রতিশ্রুতি ছিল সুস্থ স্বাভাবিক জীবনের
নিজ হাতে ভঙ্গ করলে সে প্রতিশ্রুতি
ভাবলে না সম্পর্কের ভবিষ্যৎ ।
সব কিছুকে উপেক্ষা করে চলে এলাম বাবার কাছে
তুমি খোঁজ টুকুও নিলে না
নিজেকে সামিল করলে অন্য জীবলে -
বড়ো বিশৃঙ্খল সে জীবন
হারিয়ে ফেললে নিজ সত্তা নিজের অজান্তে ।
লোক মারফৎ বার্তা পাঠালে মুক্তির
চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে নিঃশ্চুপ তোমার স্বজন
নিরুপায় আমি - নিরুপায় আমার স্বজন
তাই দ্বারস্থ আজ আদালতের -
দাবী সম্পর্কের পুনর্মিলনের ।
আইনের ধারাতে স্বজ্ঞানে বন্দী দু'জনে
লড়াইটা চলছে সমানে - সমানে
মাঝে সাজে দেখা হয় বিপরীত বেঞ্চে
তুমি ব্যস্ত ভাঙনে -
আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ নব গড়নে।
বছরের পর বছর চলছে যে লড়াই
জানি না কার হবে হার - কারই বা জিৎ ?
তবু প্রত্যাশায় থাকি তোমার ফেরার -
আমাদের সম্পর্কের পুনর্মিলনের ।



                        ( স্বত্ব নিজস্ব )
                     ©  সানন্দা নন্দী

সোমবার, ৬ আগস্ট, ২০১৮

" নীরব আলো " আগস্ট ২০১৮ - PDF ডাউনলোড




নীরব আলো -  আগস্ট ২০১৮ " - একটি ছোট্ট এবং সম্পূর্ণ স্বাধীন প্রচেষ্টা আপনাদের মনোভাব সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার | আপনাদের মধ্য থেকেই  লিখিত সংগ্রহকে এই পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশিত করা হয় প্রতি মাসে |

পত্রিকাটি কোন রকম ব্যবসায়ীক ক্ষেত্রে ব্যবহিত করার জন্য নয় | এটি একটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যের মাসিক ই-পত্রিকা |

" নীরব আলো " - আগস্ট ২০১৮ সংখ্যা প্রকাশিত হল আপনাদের জন্য  |  ডাউনলোড করুন ,পড়ুন ,আনন্দ উপভোগ করুন এবং এর সাথে নিচে কমেন্ট বাক্স এ আপনাদের মতামত ,অভিযোগ অবসায় জানাবেন  | আপনাদের মতামত নতুন লেখক লেখিকাদের আরো উৎসাহিত করবে  |

আপনারা সকলেই আমাদের মাসিক ই-পত্রিকাটি PDF ফাইল ফরম্যাট এ ডাউনলোড করতে পারবেন নিচের লিঙ্ক টিতে ক্লিক করে  | "ডাউনলোড" বোতামটিতে ক্লিক করলেই ডাউনলোড শুরু হয়ে যাবে | ধন্যবাদ


বৃহস্পতিবার, ২১ জুন, ২০১৮

" পুজোনীয় তুমি " - সঙ্ঘমিত্রা প্রামাণিক চ্যাটার্জ্জী



চিঠির প্রথমে আমার বিজয়ার প্রণাম নিও।
        কেমন আছো জানতে চাইবো না। জানি ওখানে শান্তিতেই আছো। আজ তোমাকে কত গুলো কথা বলতে চাই। তুমিই তো বলতে,"দেখবি, এমন একটা দিন আসবে সবাই তোকে অবাক হয়ে দেখবে। ইয়া একটা লম্বা গাড়ি আমার ভাঙা ঘরটার সামনে দাঁড়াবে। আশেপাশের লোকজন চোখ কপালে তুলে তোকে শুধু দেখবে।" কই,তেমন তো কেউ দেখেনা আমায়। সত্যি বলছি কেউ দেখেনা। আমার কোনো লম্বা ইয়া বড় গাড়ি কেনা হয়নি গো। হয়তো সেই অভিশাপ,হ্যাঁ মনে পড়ে তুমিই বলেছিলে আমি যখন তোমার অবাধ্য হয়েছিলাম তখন, "তুই কোনোদিনও সুখী হবিনা।" তোমার আশির্বাদ আমার লাগলো না কোনো কাজে কিন্তু তোমার অভিশাপটা কি রকম লেগে গেলো দেখো। জানো, তুমি যাদের নাম করে বলতে ওমুক মেয়েটা কাঁখে একটা, হাতে একটা বাচ্চা নিয়ে তোকে এসে বলবে, "কি দিদি তুই কেমন আছিস?এই দেখ আমার বাচ্চারা, ও ট্যাঁপা আর ও বুঁচি। তুই তখন ঠোঁটের ফাঁকে হাসি এনে ব্যাগ থেকে দুটো বাচ্চার হাতে টাকা দিয়ে বলবি ভালো করে মিষ্টি খাওয়াস ওদের।" জানো,ওর বরের লম্বা একটা গাড়ি। একটাই বাচ্চা। ছুটিতে কত জায়গায় বেড়ায়,কত ছবি পাঠায় ফেসবুকে, হোয়াটস অ্যাপে আমাকে। তুমি তখন অমন কেন বলতে গো? আমি নাকি বিদেশ যাবো আমার বরের সাথে, তুমি সব সময় বলতে। অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গায় আমি ঘুরবো। জানো, একবার ডায়মন্ড হারবার গেলেই আমাকে মাসের টাকার হিসেব করতে হয়,গুনে গুনে খরচ করতে হয় তখন। একদিক বাদ দিয়ে আর একদিকের খরচ সামলাই। তুমি আরো বলতে, "তুমি আমার বাড়ি আসবে; আমার রাঁধুনি, চাকর-বাকর তোমায় নানান কিছু রান্না করে  বসিয়ে যত্ন করে খাওয়াবে আর আমি তাদের বসে বসে হুকুম করবো।" জানো,আমার ঘরের রান্না বান্না,কাজ কম্ম সব আমিই করি। আমার একটা ঠিকে ঝিও নেই। তুমি আমায় আমার গোটা জীবনে শুধু আশির্বাদই করে গেছো। কিন্তু জীবনে একবারই অভিশাপ দিয়েছিলে। সেটাই ফলে চলেছে জীবন জুড়ে। তোমাদের অপছন্দ হয়েছিল আমার অবাধ্যতা,তবুও কেন দিলে সেই অভিশাপ? জিতে গেলে তো? আর আমি জেতার ভান করে চরম ভাবে হেরে বসে আছি জানো..? খাওয়া দাওয়ার কোনো অভাব হয়না আমার। সে সব ঠিক ঠাকই আছে। তোমার বাড়িতেও যেমন কষ্টে চলেছি আজও তেমন না হলেও স্বচ্ছলতা নেই আমার জীবনে। তবে সাধ আমার একটু একটু করে মরতে মরতে একেবারে মৃত। আমার গয়নার সাধ হলে আমাকে বলা হয়, "তুমি আর পাঁচজনের মত সাধারণ গয়না পরা নারী নয়। গয়না দিয়ে কী করবে?" এক একটা মানুষের তিনটে করে হাত। ডান বাম আর অজুহাত। আমার সাধ মরে এই ভাবেই।বেড়ানোর সাধ জাগলে যদি বলি বেড়াতে যাবো তবে শুনতে হয়,"লোকের কথায় নেচোনা। বেড়িয়ে কী হবে?" শরীরের অসুস্থতায় কাজের লোক রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করলে শুনতে হয়, "লোককে দেখে অমনি কাজের লোক রাখার ইচ্ছা জাগলো?নিজের কাজ নিজে করা ভালো। এতে শরীর সুস্থ থাকবে। আর আমাদের এতো উদ্বৃত্ত নেই যে কাজের লোকে টাকা ঢালবো।" এতকিছুর পরও লোকে জানতে যখন চায় আমি কেমন আছি। হেসে বলি "আমি ভালো আছি।"
                                                ইতি--
                                 আমি সেই মৃতপ্রায় কন্যা




                                                                                                     - সঙ্ঘমিত্রা প্রামাণিক চ্যাটার্জ্জী

সোমবার, ১১ জুন, ২০১৮

" প্রশ্ন " - সুফি রায়


সকালবেলায় ঘুম ভাঙল প্রভাতফেরীর বাজনা শুনে।
ছোট্ট খোকন দৌড়ে গেল মনে অনেক প্রশ্ন নিয়ে॥
সামনে সবার গেরুয়া পোশাক,তার পিছনে সাদার সারি।
ঐ দেখা যায় সবুজ পোশাক,দেখতে মজা লাগছে ভারি॥
খোকন শুধায়,"হ্যাঁ গো মা,ওরা যাচ্ছে কোথা এমন সাজে?
সকালবেলায় গাইছে গান,ধাই-ধমা-ধম মাদল বাজে"॥
আলতো হাতে আদর করে মা হেসে কন,"তাও জানিস নে?
আজ যে মোরা স্বাধীন হলেম,কত শত প্রাণের দানে॥
দেশের মাটি ডাক দিল যেই,ছুটল তারা আপন ভুলে।
ভায়ের অশ্রু পান করে যায় মৃত্যুনদী অবহেলে॥
পরের ঘরের বন্দীদশায় মায়ের আঁচল লুটায় ভূমে।
নিজের রক্ত ফেরি করে মায়ের মুকুট আনল জিনে॥
তাঁরাই সকল শহীদ যারা করল এমন মৃত্যুবরণ।
তাঁদের জন্যই নতুন ঊষা,আশা-ভরসা,জীবন যাপন"॥
খোকন শুধায়,
"নিজের জীবন দিলযারা,তাদের জন্য একটিই দিন?
আর বাকি দিন ভুলেই থাকে,মানুষ কেন এমন হীন?
বলতে পারিস,কোন দুখেতে নিজের জীবন করল পণ?
কোন সুখেতে মৃত্যুমুখেও বল মা ওদের ভরল মন?
আমার মতন ওঁরাও তো মা ছিল কারোর খোকনসোনা--
তাদের জন্য একবারও তো তোমার চোখটা ভিজল না..?
আমায় তবে জাগাস নে মা,আর একটুকু ঘুম যাই।
স্বপ্নঘোরে তাঁদের পায়ে হাতটা আমার ছোঁয়াই"॥
খোকার কথায় মায়ের মনে সে এক বিষম লাজ।
মন বলে তার এ এক বুঝি আধুনিকতার সাজ॥


বি: দ্র:- জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীকে আমাদের পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম। 

সেই সঙ্গে বর্তমান কাল পর্যন্ত দেশের প্রতি বলিপ্রদত্ত মহৎপ্রাণদের প্রতি এই কবিতাটি উৎসর্গীকৃত। 


                                                     - সুফি রায়
                                              © Copyright Protected









" আমরা " - অনির্বাণ রায়



এই ঘোর শীতেও কালবৈশাখী
সেই তোর সাথেই হল দেখা-দেখি।
এফোঁড়-ওফোঁড় করা তোর চাহনি..
তবু, অভিমান সরিয়ে ফিরে তাকানো হয়নি।

আমি আছি, আমি নেই তোর কী তাতে??
অটোর ভাড়া গুলিয়েছি রাস্তাতে
না চেনার অভিনয়ে এড়িয়েছি দুজনেই--
ওপারে জানি না, তবে
ভাঙচুড় চলছে এখানেই॥



                               - অনির্বাণ রায়
                                   © Copyright Protected



" হেরে যাওয়া কেউ " - অয়ন মন্ডল


ভাবনারা পালাতে চাইছে দূরে নেই কোনো দায়বদ্ধতা; 
চিন্তাগুলো এলোমেলো দুঃস্পর্শ, 
একজোটে পালাবার পথে গুঞ্জনসম কিছু বাজছে মনে, পারছি না! 
হেরে যাওয়া মানুষ কি? 
অন্তরের জলদগম্ভীর কন্ঠ চিকিৎসায় ব্যস্ত আছে ওর দায়বদ্ধতা,
গুছিয়ে বলতে চাওয়া চাতক পাখি যেনো; 
হয়তো আমি কেউ, ফিরতে চাওয়া কেউ, 
ভাবনায় সুস্থ আমি,
সত্যি কি?! 
যেনো হেরে যাওয়া এক মানুষ ।
   

                                      - অয়ন মন্ডল

                                              © Copyright Protected

















সোমবার, ৭ মে, ২০১৮

" জগদ্ধাত্রী পূজা ও কৃষ্ণনগর " - গৌরব হালদার


        কৃষ্ণনগরে দূর্গাপূজা কার্যত গ্রুপ লিগ খেলার মত; কালী পূজা সেমিফাইনাল আর জগদ্ধাত্রী পূজা ফাইনাল। কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পূজা শুরু করেছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। আর সেই শুরুর ইতিহাস আজও মানুষের মুখে মুখে পূজার সময় ফিরে আসে।

       বকেয়া রাজস্বের দায়ে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রকে বন্দী করেন সেই সময়ের নবাব আলিবর্দি খাঁ। এরপর কিছুদিনের মধ্যে নদীয়া থেকে রাজস্ব পাঠিয়ে দিলে আলিবর্দি খাঁ তাঁকে মুক্ত করেন। রাজা নৌকা করে কৃষ্ণনগরে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। নৌকায় ঢাকের আওয়াজ শুনে রাজা বুঝতে পারেন, আজ বিজয়া দশমী। এরপর তিনি দুঃখ ভরা মন নিয়ে বিশ্রাম করছিলেন| হঠাত্ স্বপ্নে তিনি দেখতে পান, এক ঘোড়াদাবা সিংহের উপর একদেবী রয়েছেন। তাঁর হাতে শঙ্খচক্র, তিনি ধনুর্ধারিনী। হঠাৎ একটি ধাতব শব্দে রাজার ঘুম ভেঙ্গে যায়। তিনি পরেরদিন কৃষ্ণনগর পৌছে রাজদরবারে সকলকে জানান তাঁর স্বপ্নের কথা। রাজপন্ডিত সবশুনে তাঁকে বলেন-"উনি দেবী জগদ্ধাত্রী; কার্ত্তিক মাসের তিথিতে পূজিতা হন।" তবে অনেকে আলিবর্দির পরিবর্তে নবাব মীরকাশিম ও নবমী তিথির কথা বলেন|

        অন্য একটি কিংবিদন্তিও জানা যায়--কৃষ্ণনগরে আসার জন্য রাজা আঠারোটি দাঁড়ের পানসি নৌকায় করে রওনা হন| প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তিনি দশমীর রাতেও পৌঁছাতে পারেন নি| দশমীর রাতে তিনি দেখেন রাজ রাজেশ্বরীকে (রাজবাড়ির দূর্গা প্রতিমার নাম)। তিনি রাজাকে স্বপ্নাদেশ দেন বাড়ি গিয়ে তপস্যায় বসতে। দ্বিতীয়দিনে বহু বাধাবিঘ্নের সৃষ্টি হলেও তিনি যেন পিছন ফিরে না তাকান; তবেই তিনি বাক্ সিদ্ধ হবেন এবং সামনে যে দেবীর মুখ দেখবেন তাঁকেই পূজা করবেন | তারপর কৃষ্ণচন্দ্র তপস্যায় বসলেন। প্ৰথমদিন ভালোভাবে কেটে গেল। দ্বিতীয়দিনে তিনি ভূতপ্রেতের বিকট চিৎকারে ভয় পেয়ে পিছনে তাকাতেই দেখলেন জগদ্ধাত্রী| তখন থেকেই পূজা শুরু হয়।

        শুরু থেকেই কৃষ্ণনগরের পূজা ছিল একদিনের; কার্ত্তিক মাসের শুক্লা নবমীর দিন। দশমীতে বিশাল শোভাযাত্রা সহযোগে বিসৰ্জন হত | শোভাযাত্রার শুরুতে থাকত রাজকীয় বেশে একটি হাতী। সঙ্গে থাকতো ঘোড়া, ঢাক, ঢোল, সানাই। কৃষ্ণনগরের রাজপথে সপারিষদ রাজা যেতেন। বর্তমানে রাজ-রাজত্ব নেই, তবুও এখনও কৃষ্ণনগরের মানুষ পূজার সময় একবার রাজবাড়ির পূজা দেখতে যাবেই যাবে। এখন আর রাজপথে রাজবাড়ির প্ৰতিমা আসে না, রাজবাড়ির দিঘিতেই বিসৰ্জন দেওয়া হয়। প্ৰচলিত আছে এটি একটি নদী যার নাম অঞ্জনা। তবে এখন বয়স্ক মানুষরা অঞ্জনা খাল বলেন|

        কৃষ্ণনগরে পূজা শুরুর পর রাজা কৃষ্ণচন্দ্র কৃষ্ণনগরের বিভিন্ন জায়গায় পূজা ছড়িয়ে দেন। মূলত রাজার অনুদানেই পূজা হত। এখন শুধুমাত্র একটি বারোয়ারী পূজার জন্য সাম্মানিক অনুদান পায়। বেশকিছু বারোয়ারী ও ক্লাবে প্ৰতিমার একটি  করে নামও থাকে, যেমন- বড়মা, মেজ মা,ছোট মা, ভালো মা, সোনা মা, মিষ্টিমা, অন্নপূর্না, মণি মা,চারদিনী মা, বুড়িমা, জলেশ্বরী ইত্যাদি।
পূর্বে শুধুই পূজা, প্ৰতিমা ও প্ৰতিমা বিসৰ্জনই আকষর্নের কেন্দ্র ছিল। রাজবাড়ীর প্ৰতিমা নিরঞ্জনের পর এক এক করে সব প্ৰতিমা রাজবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হত। রাজবাড়ী থেকে উপহার হিসাবে পিতলের ঘড়া দেওয়া হত। ঘড়াটিকে বাঁশের মাথায় লাগিয়ে প্ৰতিমা আড়ং বা সাং-এর মাধ্যমে কদমতলা ঘাটে বিসৰ্জন দেওয়া হত। রাজবাড়ী থেকে এখন আর কোন উপহার দেওয়া না হলেও, প্ৰতিটি প্ৰতিমাকে এখনো রাজবাড়ী ঘুরিয়ে রাজপথ দিয়ে নিয়ে আসা হয়। রাজপথের কোন এক জায়গায় অপেক্ষা করলে সব প্ৰতিমা দেখা যায়। বর্তমানে দুইদিন ধরে প্ৰতিমা বিসৰ্জন হয়। দশমী, অর্থাৎ বিসৰ্জনের প্ৰথমদিন সকালে ঘট বিসৰ্জন শোভাযাত্রার আয়োজন হয়। কিছু বারোয়ারী এতে অংশ নেয়। বিভিন্ন ট্যাবলো সহযোগে এই শোভাযাত্রা হয়। রবীন্দ্রনাথ, নেতাজী থেকে এ.পি.জে. আব্দুল কালাম, শাহরুখ খান থেকে দেব, বিভিন্ন সরকারী প্ৰকল্প, সচেতনা,পূজার ইতিহাস উঠে আসে ট্যাবলো তে, যা দেখতে রাজপথে রোদ্দুরে অপেক্ষা করে বহু মানুষ ভিড় করেন। সাথে বহুরকমের বাজনা, মুখে "উই উই", "আসছে কারা???"" বলে পাড়ার নাম ধরে সমবেত আওয়াজ, কখনও তাদের প্ৰতিমার নাম করে জয় জয় ধ্বনি, মাঝে মাঝে হাততালির সমবেত আওয়াজ, প্ৰতিমা নিরঞ্জনে সময় আড়ং বা সাঙ মানে কাঁধে করে প্ৰতিমা নিয়ে ঢাকের তালে লাফালাফি করে দৌড়ে আসা-- এটাই আনন্দ। 

কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বারোয়ারী :

চাষাপাড়া-- প্ৰথম বারোয়ারী হিসাবে প্রথম বছর ঘটপূজা শুরু করে। দ্বিতীয় বছর পটচিত্রে এবং তারপরের বছর থেকে প্ৰতিমার মাধ্যমে পূজা হয়, যা সারাদেশে জনপ্ৰিয় "বুড়িমা" নামে। এবছর ২৪৪তম বর্ষ। দেবীকে এখানে স্বর্নালঙ্কারে সাজানো হয়। 

মালোপাড়া-- এখানকার মা 'শ্ৰী শ্ৰী জলেশ্বরী দেবী' নামে বিখ্যাত| ঐতিহ্যকে সঙ্গী করে এই বারোয়ারী রয়েছে। এই বারোয়ারী কৃষ্ণনগরের একমাত্র বারোয়ারী যারা এখনও রাজ পরিবার থেকে অনুদান পায়। পূজার আগেরদিন রাতে ছেলেরা মেয়ে সেজে জল আনতে যায় জলঙ্গী নদীতে। এই প্ৰথার নাম জলসজ্জা। এছাড়া ঐতিহ্যের মধ্যে আছে ধুনো পোড়ানো, বলি প্ৰথা। এখনো এখানে কার্বাইট গ্যাসের আলো বিসৰ্জনের সময় মায়ের মুখ উজ্জ্বল করে, যা দেখতে সবাই একবছর অপেক্ষা করে থাকে।

বাঘাডাঙ্গা-- কৃষ্ণনগরের অন্যতম পুরনো পূজা। নতুন থিম, বাঘ-সিংহের লড়াই-এ দেবীর অবস্থান।

কাঠালপোতা বারোয়ারী-- মূলত প্ৰতিমা নির্ভর পূজা।

রাধানগর অন্নপূর্না সরণী-- থিমের জোয়ার। এবারের আকর্ষণ কর্ণাটকের মাদুরেশ্বর শিব মন্দির।

শক্তিনগর এম.এন.বি-- বড় বাজেটের থিমনির্ভর পূজা।
এছাড়া থিমের কাজ দেখা যায়- ঘূর্ণি ভাই ভাই, ঘূর্ণি শিবতলা, ঘূর্ণি হালদার পাড়া, তাঁতিপাড়া, দর্জিপাড়া, শক্তিনগর পাঁচ মাথা মোড়, আমিন বাজার,  বাগদি পাড়া প্ৰভৃতি স্থানে।

মাদল--কৃষ্ণনগরে "মাদল" জনপ্ৰিয়তা লাভ করেছে। শিল্পী সায়ন তরফদারের হাত ধরে নতুন ভাবনাকে সাথে নিয়ে তারা এবার সাত বছরে। অভিনব প্ৰতিমা ও বিষয়ভাবনাকে নিয়ে শহরে আলদা জায়গা করে নিয়েছে।ষসাধারণত প্ৰতিমা প্ৰতিটা বারোয়ারী একই রাখে, কিন্তু মাদল প্ৰতিবছর নতুন নতুন ভাবনায় তাদের প্ৰতিমা ও মণ্ডপসজ্জা করছে, যা শহর বাসীর কাছে নতুন পাওয়া।

রাজদূতক্লাব, ক্লাব বিশ্বরূপা, চকের পাড়া--সুসজ্জিত প্ৰতিমা 

নুড়িপাড়া বারোয়ারী -- কৃষ্ণনগরের একমাত্র পূজা যা চারদিন ধরে হয়। তাই এখানকার প্ৰতিমা চারদিনী মা নামে খ্যাত।

কালিনগর ক্লাব রেনবো-- নতুন নতুন থিমের ভাবনায় নজরকাড়া, বড় বাজেটের পূজা।

পাত্রবাজার স্বীকৃতি -- থিমেই বাজিমাত করে পাত্রবাজার।

হাতারপাড়া-- ঘট বিসৰ্জন মূল আর্কষণ।

      এছাড়াও কয়েকটি বড়পূজা হল--যুবগোষ্ঠী, গোলাপট্টি, উকিলপাড়া, কাঠুরিয়া পাড়া, ষষ্ঠীতলা, নেদেরপাড়া, বৌবাজার, শক্তি সংঘ, চৌধুরী পাড়া, রায়পাড়া-মালি পাড়া, বালকেশ্বরী, জজকোর্ট পাড়া,কলেজষ্ট্রীট, নাজিরা পাড়া, ক্লাব একতা, সেন্ট্রাল ক্লাব, আমরা কজন, অনন্যা ইত্যাদি | বাড়ি, ক্লাব ও বারোয়ারী মিলিয়ে ছোটবড় প্ৰায় ৪৫০ টি মত পূজা হয়। সর্বশেষে বলতেই হবে কৃষ্ণনগরে পূজা আবেগের, ভালোবাসার ।

©  গৌরব হালদার






" এক শীতের সকাল " - মনোজ রায়


        "কিগো  শুনছো..!! কত বেলা হয়ে গেল  তো। এবার  ওঠো।"

        আমি পাশ ফিরে চাদরটা মুড়ি দিয়ে আবার শুয়ে পড়লাম। হঠাৎ মাথায় এলো আজকে অফিসে বস কে রিপোর্টটা জমা দিতে হবে। কাজটা কালকে বস আমাকে দিয়েছিলো। হুড়মুড় করে বিছানায় উঠে বসলাম। ঘড়িতে  তখন ৮:১৫ বাজে। অর্পিকে ডেকে বললাম, "জলটা গরম করে দাও তো তাড়াতাড়ি"।

        অর্পিতা, আমার বউ। ভালোবেসে অর্পি বলে ডাকি।

        স্নান সেরে এসে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিলাম। ওদিকে অর্পি ব্রেকফাস্ট টেবিল  সাজাচ্ছে। অফিসের কাগজ-পত্রগুলো আমার টেবিলেই রয়ে গেছে। রাতে  কাজ করতে করতে আর গুছিয়ে রাখা হয়নি।

        "উফফফ...!! পেপারগুলো যে আটকাবো, একটা পেপার ক্লিপও পাচ্ছিনা।" টেবিলে, ড্রয়ারে খোঁজাখুঁজি শুরু করে দিলাম। এদিকে ৯টা বেজে গেছে। ৯:২৫ এর বাসটা ধরতেই হবে। শেষমেষ একটা পেপার পিন খুঁজে পেলাম। কাগজগুলোকে আটকে ফাইলে ভরে নিলাম। ড্রয়ারটা বন্ধ করতে গিয়ে হঠাৎ চোখ পড়লো  ড্রয়ারের ভেতরে শেষ  প্রান্তে.. একটি  গোলাপি  রঙের  কাগজ। অনেকদিন পড়ে থেকে কেমন যেন ধূসর হয়ে এসেছে। কাগজটি  হাতে  নিয়ে  খুলতেই ... 
         "তোমাকে পাওয়া আমার ভাগ্যে নেই, 
কিন্তু তুমি আমার হৃদয়ে চিরদিনের মতো বাসা করে নিয়েছো। 
অনেক কিছু না বলা রয়ে গেল। ভালো থেকো  ....সুখে  থেকো ...।

                                          --- তোমার কাছের বন্ধু 
                                                     অনিতা "

        পড়তে পড়তে পৌঁছে গেলাম ৭ বছর আগের কলেজ লাইফে। কলেজের প্রথম দিন ...,অটো থেকে নেমে একটা গভীর শ্বাস নিয়ে কলেজের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম| তারপর গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকে একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম, "দাদা ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাসটা কোথায় বলতে পারবে?" 
---কোন রুমে বলতে পারছিনা তবে দোতলাতে হয়।"
---আচ্ছা ঠিক আছে, ধন্যবাদ।"

আমি দোতালার দিকে এগোতে লাগলাম। হঠাৎ পেছন থেকে শুনতে পেলাম..
---"এই  যে  কি  হচ্ছে  এসব?" 
ঘুরে দেখি একটি মেয়ে। আমি কিছু বলার আগেই আমার গালে একটা চড় বসিয়ে দিল। সেই মুহূর্তে কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না কি হলো। কিছুক্ষণ পর ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম যখন মেয়েটি বললো,
---"আমি তোমাকে চিনিনা জানিনা; তোমার সাহস কি করে হলো আমাকে চিঠি  দেওয়ার? এরপর যদি এরকম করেছো তো সোজা জেলের হাওয়া খাইয়ে দেব।"
এই বলে সে সেখান থেকে চলে গেলো। আমি কিছু বলার সুযোগ ও পেলাম না।

       যাই হোক, কোনো রকমে ক্লাসরুমটা খুঁজে পেলাম। রুমে ঢুকতেই দেখি সেই মেয়েটি বাঁদিকের দ্বিতীয় বেঞ্চে বসে পাশের বান্ধবীর সাথে কথা বলছে। তখন আমাকে লক্ষ্য করেনি, আমিও আর  কিছু বলতে যাইনি। চুপচাপ ডানদিকের তৃতীয় বেঞ্চে গিয়ে বসলাম। হঠাৎ করে ওর নজর পড়লো আমার দিকে। ওর চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছিল যেন আবার আমাকে মারতে চাইছে। ক্লাস  শেষে আমি নিজের মত বেরিয়ে গেলাম।

        পরের দিন আমি আবার ডান দিকের তৃতীয় বেঞ্চে গিয়ে বসলাম। হঠাৎ দেখি মেয়েটি আমার পাশে এসে বসলো।
---"সরি  !!! আসলে আমি অন্য একজনকে ভেবে তোমাকে চড় মেরে ফেলেছি..,I  am  very sorry। কিন্তু তুমি আমাকে কিছু বললে না কেন কালকে?"
---"আমার প্রথম দিন ছিল কালকে। আর যখন চড় মারলে আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। ভেবেছিলাম দুটো কথা শোনাবো। তারপর ভাবলাম, প্রথমদিন ঝামেলা করা ঠিক হবেনা। তাই আর  ...."

        এরপর আস্তে আস্তে আমাদের কথা বলা শুরু হয়ে গেলো। আমরা অনেক কাছাকাছি চলে এসেছিলাম। বুঝতেই পারিনি যে কখন ও আমার মনে জায়গা করে নিয়েছে।

        আমরা একটা ফিল্ম দেখার প্ল্যান করেছি। মনে মনে বেশ এক্সাইটেড ছিলামি। রোজকার মতো ডানদিকের তৃতীয় বেঞ্চে বসে ওর অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিন্তু সেদিন ও এলো না।ক্লাসে বসে শুধু ওর কথাই ভাবছিলাম। ক্লাস শেষে ওকে অনেকবার কল করার চেষ্টা করলাম কিন্তু কোনোভাবেই যোগাযোগ করতে পারলাম না।

        টানা দুদিন ওর কোনো খোঁজ পেলাম না। এরপর একদিন ক্লাসে বসে ওর কথা ভাবতে ভাবতে বুঝতেই পারিনি কখন ক্লাস শেষ হয়ে গেছে। সকলেই চলে গেছে। বুঝতে পারছিলাম না কি হল। হঠাৎ  ওর এক বান্ধবী আমার কাছে এসে বললো.., "এই চিঠিটা তোমার জন্য..  অনিতা দিয়েছে।"
আর কিছু না ভেবেই আমি কাগজটা হাতে নিয়ে পড়তে লাগলাম--

        "তোমাকে পাওয়া আমার ভাগ্যে নেই ..... ... ..।"

        চোখের জল আর আটকে রাখতে পারিনি। হঠাৎ ডাক পড়লো..
---"কি গো, ব্রেকফাস্ট রেডি হয়ে গেছে তো। অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে যে..।" কোনোরকমে চোখের জল মুছে ঘড়ির দিকে তাকালাম....  ৯:১০ বাজে। চিঠিটা আবার ড্রয়ারে রেখে ব্রেকফাস্ট টেবিলে ছুট লাগালাম।

সত্যি .... অনেক কিছু না বলা রয়ে গেল!!

© মনোজ রায়

" ছন্দপতন " - সুফি রায়


নতুন মলজোড়াটা হাতে করে বসে আছে শফরী। গালে নোনা জলের দাগ বসে গেছে। গলা-বুক ভিজে গেছে জলে। কিন্তু চোখের জল যে আজ বাধা মানছে না কিছুতেই। যার কারণ খুঁজতে গিয়ে শফরী তোলপাড় করে ফেলছে তার চার বছর আগেকার জীবন।

    আসলে আজ তার জীবন থেকে চঞ্চল চলে গেল। চঞ্চল তার বন্ধু মাত্র। কিন্তু....। আসলে সেই কলেজের ফার্স্ট ইয়ার থেকেই চঞ্চল ওকে ভালবাসে। শুধু ভালবাসে বললে অনেক কম বলা হয়। শফরীর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সবকিছুই ছিল চঞ্চলের ভালবাসা। কিন্তু শফরীকে সেটা জানিয়েই চরম ভুল করেছিল ও। তারপর থেকে এতগুলো বছর চঞ্চলকে এড়িয়েই চলছিল শফরী। এরমধ্যে সোহম এসেছে তার জীবনে। দুবছরের প্রেম পরিণতি পেতে চলেছে এবার। কিন্তু ঠিক তার আগেই জীবনের ছন্দটা একটু অচেনা সুরে বাজল।

    গতকাল বিকেলে হঠাৎ একটা অজানা নম্বর থেকে ফোন--
   -কি রে.. চিনতে পারছিস?
   -চঞ্চল তুই? কেন চিনব না?
    শফরী সত্যিই চিনেছিল। কেন চিনবে না সে? যতই হোক, খুব ভাল বন্ধু ছিল তারা।
   -বিয়ে করছিস যে জানালি না তো..?
   -আরে সেরকম কিছু নয়। আসলে তোর নম্বর ছিল না তো। তুই কোথায় পেলি আমার নম্বর?
   -মোহনের থেকে। যাই হোক,কাল একবার মিট করতে পারবি? তোর বিয়ের গিফ্টটা নিবি না? আমি তো আর তোর মত কিপটে নই।
    দুজনেই হেসে গড়িয়ে পড়েছিল।
   -এখনো আগের মতই আছিস দেখছি। ওকে.. তবে কাল বিকেলে  কলেজ 

স্ট্রীট মোড়,ওখান থেকে কফি হাউস। আবার আগের মতই।

আজ পৌঁছতে একটু দেরি হয়ে গেল শফরীর। রাস্তার ওপার থেকে তাকে দেখতে পেয়ে সাত দেখিয়ে সেখানেই দাঁড়াতে বলল চঞ্চল। ও আসছে এপাড়ে। আ..আ..! হঠাৎ তীক্ষ্ন হর্ন বাজিয়ে ক্যাঁচ শব্দ করে থেমে গেল গাড়িটা। মুহূর্তে সব অন্ধকার হয়ে গেল শফরীর।

    তারপর থেকে সবকিছু কেমন একটা ঘোরের মধ্যে দিয়ে ঘটে চলল। শফরী স্তব্ধ হয়ে গেছিল চঞ্চলের মৃত্যুর খবরটা শুনে। কানদুটো যেন ঝাঁ ঝাঁ করছে। একটু আগেই তো ছেলেটা দৌড়ে আসছিল তার সঙ্গে দেখা করতে,কথা বলতে। তবে?

   -মিস গাঙ্গুলি..?
    নার্সের ডাকে হুঁশ ফিরল শফরীর।
   -হ্যাঁ বলুন।
   -পেশেন্টের এই জিনিসগুলো..
    মনটা মোচড় দিয়ে উঠল। ওর বিয়ের উপহার নিয়ে এসেছিল ছেলেটা। শফরী ওকে ভালবাসা দিতে পারেনি ঠিকই। কিন্তু এতবছর পরে এক নতুন জীবন শুরু করার আগে সে কোন তিক্ততা রাখতে চায়নি সম্পর্কে। তাই দেখা করতে আপত্তি করেনি। কিন্তু এ কি হল..? কাঁপা হাতে প্যাকেটটা নিল শফরী। তাতে একটা মাঝারি মাপের বাক্স। রঙীন কাগজের মোড়কে তার নাম লেখা। চোখটা একটু ঝাপসা হয়ে আসল তার। বাক্সটা খুলে দেখে তাতে একজোড়া মল। শফরী পায়ে মল পড়তে খুব ভালবাসে। এখনো। সব সময় পড়ে থাকে। মলের সঙ্গে একটা চিরকুট ও রয়েছে। তাতে লেখা- "তোর নতুন জীবনের প্রথম পদক্ষেপ হবে আমার ছন্দে বাঁধা। তোর প্রতিটা শফরী-চঞ্চল পদক্ষেপে বাজবে আমার জীবনের সুর-ছন্দ।"

মুহূর্তে শফরীর বুকটা ভিজে গেল চোখের জলে। শফরীর নতুন জীবন ঠিকই, কিন্তু ও কিছুতেই নিজের মনকে বোঝাতে পারল না কেমন করে ওর এই নতুন জীবনেরই ছন্দপতন ঘটে গেল।

                                                                                                 © সুফি রায়








" আতসবাজি " - সুফি রায়

        "যার বাপের খাওয়ানোর মুরোদ নেই তার বাজি পুড়িয়ে ফুটানি করা চলে না। পিন্ডি জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছি.., আর লাট সাহেবের বেটি বাজি পোড়াবে..। সৎ মায়ের মুখ ঝামটা খেয়েই কেটেছে ঝিলমিলের সারাটা শৈশব। 

        "... .. দিদিইই...,আমার জন্য কী এনেছ??"
—-"আজকে একটা নতুন জিনিস এনেছি। এই বলে ব্যাগ থেকে প্যাকেটগুলো বের করে বোনের হাতে দিল ঝিলমিল।
—-"বাজিইইই..???? আআআ... মজা হবে।"

        রাতে আতসবাজির আলোয় যখন বোনের চোখদুটো চকচক করে ওঠে তখন ঝিলমিলের মধ্যেও জেগে ওঠে এক দ্বাদশী কিশোরী। আসলে মা তাকে সৎমেয়ে মনে করলেও বোনকে সে কখনোই সৎমায়ের মেয়ে ভাবেনি। তাই বোনের খুশিকে আকণ্ঠ পান করেই বাজি পোড়ানোর আশ মেটায় ঝিলমিল।

© সুফি রায়











" ভাইফোঁটা " - সুফি রায়



        নতুন বউ আসার পর থেকেই ভাইটা কেমন বদলে গেছে। ওকে মানুষ করার জন্য যে দিদি অবিবাহিত থেকেছে সেই দিদিকেই এখন ওর বোঝা মনে হয়। তাই বউকে নিয়ে চলে গেল আলাদা সংসারে। কিন্তু তাই বলে আজকের দিনেই চলে যাবে ও?? এভাবে, ভাইফোঁটা না নিয়েই!! দিদির কান্না কি ওর কানে গেলই না??

       ফোনটা বেজে উঠল। ওপাশে নতুন বউ কান্নায় ভেঙে পড়েছে, "তোমার ভাইয়ের অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে দিদি।" শুনে হঠাৎ ফ্যাকাশে হয়ে গেল অসীমা। কিনতু পরক্ষণেই তার ফ্যাকাশে মুখে খেলে গেল এক ক্রূর নিষ্ঠুর হাসি... "দেখলি তো ভাই, আমার থেকে ফোঁটা না নিয়ে কি ভুল করেছিস..!!"

                                                                                                        ©  সুফি রায়















"আমি আছি.. আমি নেই" - অনির্বাণ রায়


কলেজ স্ট্রীট থেকে কেনা কবিতার সংকলনে..
বিকেলে শোনা রেডিওর প্রেমের বাংলা গানে
আমায় খুঁজিস না, ওখানে আমি তো নেই।

আমায় খোঁজ করে দেখ কলেজ নোটের পাতায়।
জুলজির কপিতে, B.K.D এর খাতায়
পেন্সিলের আঁচড়ে; আমার অস্তিত্ব থোর খাতাতেই।

ভালোভাবে খুঁজে দেখ—
আমি আছি তোর কলেজ নোটে।
আমি বাঁচি, তোর ভেজা ঠোঁটে।

DVD-র চেনা-অচেনা প্রেমের সিনেমাগুলোতে..,
সন্ধ্যাবেলায় cleansing milk-এর ভেজা তুলোতে
আমি থাকি না; সেখানে তো আমার থাকতে নেই।

অভ্যাসের বাইরে বেরিয়ে আনমনাদের হাত ধরে—
ঘুমের আচ্ছন্নতায় যদি কেউ এসে জড়িয়ে ধরে
তবে তো সে তোকে অবাধ্য হয়ে রূপকথা শোনাবেই।

ভালোভাবে শুনে দেখ,
আমি থাকি তোর রূপকথাতে।
আমি রাখি ভোর তোর ঘুমে ভেজা বালিশের মাথাতে॥


                                      ©  অনির্বাণ রায়













"একলা বসে" - সুফি রায়

যখনই থাকি একলা বসে
       তোমায় নিয়ে ভাবি,
তোমাকে আমার কবিতা করে
       হয়েছি তোমার কবি।

যখনই থাকি একলা বসে
      মনেতে ছবি আঁকি-
জ্যোৎস্না ভরা মুখখানাতে
      কাজল মাখা আঁখি।

মিষ্টি কথার দুষ্টুমিতে
      বাজল মনে বাঁশি,
লাল লাল ঐ ঠোঁটের কোণে
       এক চিলতে হাসি।

যখনই থাকি একলা বসে
       তোমায় খুঁজে বেড়াই..,
তোমার কথা ভেবে ভেবে
        এ মন যে তাই হারাই।

যখনই থাকি একলা বসে
         তোমায় যে মন চায়-
অজান্তিতেই শূন্য দিশায়
        শুধুই দু-হাত বাড়ায়।

যখনই থাকি একলা বসে
     তোমায় মনে পড়ে,
তাই বুঝি দু-নয়ন আমার
       স্বপ্ন - প্রাসাদ গড়ে ।।


               © সুফি রায়












"মৃত্যুমুখী প্রেম" - অনির্বাণ রায়



তুই নেই তাই পুড়ছে সময় দু ঠোঁটের ফাঁকে,
'তুই আসবি' বিশ্বাসের চশমা আটকে রাস্তার বাঁকে।
তুই নেই তাই রক্তেরা শান্ত দীঘির জল
তোর অপেক্ষা আর কত করব বল..।
আমার ঠোঁট মিশেছিল যবে তোর ঠোঁটে...
অনুভূতিরা বন্দী হয়েছিল স্নায়ুদের যানজটে।
যাচ্ছে সময় আর পুড়ছি আমি--
ঠোঁট হচ্ছে ক্ষয়িষ্ণু বাদামি।
মৃত্যুর দিকে ছুটে যায়, সমস্ত প্রেম...
সমস্ত ট্রেন
সমস্ত ড্রেন
সমস্ত প্রেম.. মৃত্যুর দিকে ছুটে যায়।



                               ©  অনির্বাণ রায়

"এমন কেন হয়?" - সুফি রায়



বলতে পারিস, এমন কেন হয়?
এখনো আমার মনটা কেন তোকেই ঘিরে রয়?

যখন তোকে প্রথম দেখি ছাদের চিলেকোঠায়,
বিকেলবেলার রোদ পড়েছে গাছের মাথায় মাথায়।
কীসের টানে হঠাৎ করে
স্বপ্নগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে,
খুলে দিয়ে মনের আগল, ভাসল উজানে।
বলতে পারিস, কোন তুফানে?
আজও আমার মনটা এমন উতল অকারণে।

সেদিন যখন বাড়ির পথে,তোর হাতটা আমার হাতে,
কেমন যেন এক শিহরণ জাগালো আমার বুকের মাঝে।
আজও খোঁজে আমার দুচোখ,
সেই দুটো হাত, নরম আদর---
সেই প্রথম দিনের আলতো ছোঁয়া
আজ যেন সব কালচে ধোঁয়া।
বলতে পারিস, কী ভুল ছিল?
তোর ঠিকানা বদলে গেল. . .

সেদিন যখন ঘুম ভাঙালি
"পথ আলাদা", বলতে এলি---
ভুলে গেলি সেই চেনা গান,
অনেক কথা, মান-অভিমান,
জানলি না তো কোনখানেতে গোপন ব্যথা বাজল,
কিসের ব্যথায় মনটা এমন মোচড় দিয়ে উঠল..।

বলতে পারিস,স্মৃতিগুলো তাড়িয়ে কেন বেড়ায়?
আজও আমার মনটা কেন শুধুই তোকে চায়?

                         
                                            ©  সুফি রায়