সোমবার, ১০ জুলাই, ২০১৭

" আবার বার্ড-ফ্লু হলে " - অরুণোদয় ভট্টাচার্য





এ বঙ্গে আকাশটা নেই আর ব্লু


উড়ে এসে গেঁড়ে বসে আছে বার্ড-ফ্লু।


'কালিং' আর নয় ফুল চয়ন নিপুণ—


সাদা ভূত সেজে কর গলা টিপে খুন ! 

কিচেন চিকেনহীন গোঁড়া বৈষ্ণব,


এগেটারিয়ানরাও কাঁদে ঐ সব !





অবনী বলল 'চল চড়ে টাটাসুমো


ভুবনেশ্বর গিয়ে খেয়ে আসি মোমো !'


দাশু বলে,'আমি দাস কেবিনেই ঢুকি,


আরে বাবা,এ শহরে কীসে নেই ঝুঁকি?'








                — অরুণোদয় ভট্টাচার্য

" GREETINGS CARD " - মনোজ রায়



দেখতে দেখতে বিদায় নিতে চলেছে আরো একটা বছর ,২০১৬। সঠিক মুহূর্তের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ২০১৭ দরজায় উঁকি মারছে। ৩১ শে ডিসেম্বর থেকেই হু হু করে চড়তে থাকে উন্মাদনার পারদ। বছরের শেষ রাতে ঝলমলে আলোর মাঝেই শুরু হয় নতুন বছর শুরুর অপেক্ষা। ঘড়ির কাঁটাও যেন ধীরে চলতে থাকে, বাড়িয়ে দেয় অপেক্ষার অধীরতা। কারণ একটি সেকেণ্ডে সময়ের ব্যাবধান হয়ে দাঁড়ায় পুরো একটা বছর। আর নতুন বছর মানেই সকলে মিলে আড্ডা ,গল্প, পিকনিক। তবে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো গ্রিটিংস কার্ডের মাধ্যমে নববর্ষের শুভেচ্ছাবার্তা আদান প্রদান। নার্সারি পড়ুয়া থেকে শুরু করে বয়স্ক- সবাই তাদের আপনজন, আত্মীয়-বন্ধুদের গ্রিটিংস কার্ড দিয়ে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানায়।

        Greetings Card এর প্রচলন শুরু হয় প্রাচীন চীন দেশে। তখন তারা নিজেদের সদিচ্ছাগুলি একে অপরের সাথে আদানপ্রদান করতো নতুন বছর উদযাপন করার সময়। মিশরীয়রা শুভেচ্ছা আদানপ্রদান করতো প্যাপিরাসের উপর। জার্মানরা পরিচিত ছিল ১৪ শতকের দিকে কাঠের টুকরোর উপর এঁকে শুভেচ্ছা আদানপ্রদান এর জন্য। ১৫ শতকের প্রথম দিকে হাতে বানানো কাগজের Greetings Cardব্যবহার করতো ইউরোপীয়রা। সবথেকে পুরোনো ভ্যালেনটাইন বর্তমানে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রাখা আছে। ১৮৫০ এর দিকে হাতে তৈরী Greetings Card অনেক বেশি দামি এবং জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তারপর ধীরে ধীরে অনেকেই গ্রিটিংস কার্ড ছাপার আকারে বাজারে আনতে উদ্যোগী হয়।

        নববর্ষ ছাড়া Greetings Card অন্যান্য অনুষ্ঠানেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন- জন্মদিন, বিয়ে অথবা বিবাহবার্ষিকী, শিক্ষক দিবস, ক্রিসমাস ইত্যাদি। Greetings Card দোকানে কিনতে পাওয়া গেলেও অনেকেই নিজের হাতে বানিয়ে দিতে পছন্দ করে। কিনতু বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া (হোয়াটস্যাপ, ফেসবুক, টেলিগ্রাম, ইমো ইত্যাদি) এবং ইলেকট্রনিক মেসেজিং সার্ভিসগুলোর কারণে


Greetings Card এর ব্যবহার কমে এসেছে। ভেবে আশ্চর্য বোধ হয় রে, আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত Greetings Card ব্যবহার কমলেও প্রাশ্চাত্য দেশগুলিতে এর ব্যবহার এখনো আছে। পাশ্চাত্য দেশগুলি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ক্ষেত্রে সময়ের নিরীখে আমাদের থেকে অনেক এগিয়ে। তা সত্ত্বেও সেখানে গ্রিটিংস কার্ডের চল রয়েছে, বিশেষ করে এই ডিসেম্বর-জানুয়ারী মাসে। আসলে সময়ের সাথে সাথে মানুষ যত আধুনিক হয়েছে ততই কমে গেছে সামাজিকতার আন্তরিকতা। তাই এখন আর বছর শেষে দোকানে মানুষের ভিড় দেখা যায় না। দোকানের বাইরেও ঝুলতে দেখা যায় না ছোট-বড় রং-বেরঙের কার্ড। যদিও এখনও সবাই একে অপরকে শুভেচ্ছা জানায়। তবে তা হাতে হাতে উষ্ণ অনুভূতি নয়, তা অসাড় মুঠোফোনের শীতল সামাজিকতা। 



                                                                            - মনোজ রায়

" রিমির মৃত্যু রহস্য - দ্বিতীয় অংশ " - মনোজ রায়



      অদিতি একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল, "এরকম কেন বলছেন? ও তো আমার সাথেই এলো। কত গল্প করলাম আমরা। একসাথে খেলাম। তারপর ও নিজেই বললো হোস্টেলে আসতে, আপনার সাথে দেখা করে... "
— "অদিতি মৃত মানুষ কখনো ফিরে আসেনা।"


অদিতি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে মিসেস রায়-এর দিকে। এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো হৃদস্পন্দন স্তব্ধ হয়ে গেছে।
— "মৃত মানুষ?? আমার রিমি বেঁচে আছে। আমার সাথেই ছিল সারাদিন। আজ ওর জন্মদিন আর আজকের দিনে আপনি এরকম কী করে বলতে পারেন?"
— "মিসেস ব্যানার্জী, আপনি আমার ঘরে চলুন। আমি আপনাকে সব বলছি।"
দুজনেই ঘরে এসে বসলেন। একটু সময় নিয়ে ইন-চার্জ বললেন, "রিমি দুমাস আগেই মারা গেছে। হোস্টেলেই। স্যুইসাইড।"
এবার আর অদিতির চোখের জল বাঁধা মানল না। মুখে আঁচল চাপা দিয়ে অঝোরে কাঁদতে লাগল। অদিতির মনে হচ্ছে যেন এবার ও সত্যি সত্যি বোনকে হারিয়ে ফেলল। এতদিন কোনো খোঁজ পাওয়া না গেলেও ওর মনে একটা আশা ছিল হয়ত রিমি ফিরে আসবে। কিন্তু আজকে এই কথা শোনার পর অদিতি বুঝে গেছে যে রিমি আর কোনদিন ফিরবে না। এটা যেন ও কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না। মিসেস রায় নেজের চেয়ার ছেড়ে এসে ওকে সান্ত্বনা দিতে থাকলেন।

অদিতি নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে বলল, "কি হয়েছিল? বলুন আমাকে।" একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিসেস রায় বলতে শুরু করলেন- "সেদিন ছিল রবিবার। কলেজে

তিনদিনের ছুটি দেওয়া হয়েছিল। তাই অনেকেই শনিবার রাতে বা রবিবার সকালে বাড়ি চলে গিয়েছিল। রিমিকে নিয়ে নয়জন মতো ছিল হোস্টেলে। তখন রাত প্রায় দশটা। আমি ঘরেই ছিলাম। এমন সময় একজনের চিৎকার শুনলাম। জানলা খুলে বাইরে কিছু দেখতে পেলাম না। কিছুক্ষণ পরে সাত-আটজন মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে এলো আমার ঘরে।"
— "ম্যাডাম রিমি...!!"
— "কি হয়েছে রিমির?"
— "আমরা সবাই খাওয়ার পরে ছাদে বসে গল্প করছিলাম। রিমিও ছিল আমাদের সাথে। এদিক সেদিক ঘুরতে ঘুরতে ছাদের কিনারায় গিয়ে দাঁড়ালো। আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে দিলো। আমরা খুব ঘাবড়ে গেলাম। কিছু না বুঝতে পেরে আপনার কাছে এলাম। আমাদের খুব ভয় লাগছে।
— "সে কি..!! কী সব বলছো তোমরা? কোথায় ঝাঁপ দিলো? কেন? আমাকে দেখাও.. চল তোমরা।"
— "সেখানেই পড়ে আছে ম্যাডাম। আমরা কিছু করিনি।"
— "আচ্ছা চল, আগে রিমিকে দেখি।"
এই বলে মিসেস রায় একটু থামলেন। অদিতির চোখ থেকে সমানে জল গড়িয়ে পড়ছে তখনো। জিজ্ঞেস করল, "তারপর??"
— "আমি সবার সাথে গেলাম সেখানে। কাছে গিয়ে দেখলাম রিমি আর নেই। রিমি খুব ভালো মেয়ে ছিল। এভাবে ছেড়ে তো দেওয়া যায়না। তাই তাড়াতাড়ি কলেজ ট্রাস্টি কে কল করে সব কিছু জানালাম। মিঃ সেন বিরক্ত হয়ে বললেন, 'এটা যেন কোনো ভাবেই জানাজানি না হয়। কোনভাবেই যেন কলেজের বদনাম না হয়। তুমি আপাতত স্টুডেন্টদের হ্যাণ্ডেল করো। আমি দেখছি।' এই বলে উনি কলটা কেটে দিলেন। রিমির জন্য খারাপ লাগলেও ওপরমহলের কাছে আমার হাত-পা বাঁধা ছিল। সেদিন ওনার নির্দেশ মতোই সবাইকে জানানো হয়েছিল যে রিমিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।"

 "কিন্তু আমার বোন সুইসাইড করেছে এটা আমি কোনোমতেই মানতে পারবনা। ও খুব সাহসী। কিছু নিশ্চয়ই লুকোচ্ছেন আমার কাছে। নইলে হোস্টেলেই লুকিয়ে আছে ওর সুইসাইড করার কারণ।"

এটা শুনে মিসেস রায় ঘাবড়ে গেলেন, "আমি আপনার মনের অবস্থাটা বুঝতে
পারছি। কিন্তু যা হয়েছে তাতে আমাদের কোন দোষ ছিল না। তাছাড়া রিমি তো ফিরে আসবে না। আর আপনি যদি পুলিশে কমপ্লেইন করেন আমার যা হয় হবে। কিনতু সাথে ওই সাত-আটজন মেয়ের লাইফও নষ্ট হয়ে যাবে। প্লিজ এরকম কিছু...."
মিসেস রায়ের কথা শেষ হতে পারল না। তার আগেই একটা তীক্ষ্ন চীৎকারে বুক কেঁপে উঠল। শব্দের আকস্মিকতায় সকলেই স্তম্ভিত। তারপর দুজনেই ছুটলেন আওয়াজ লক্ষ্য করে, হোস্টেলের দিকে।
করিডোরে অনেক মেয়ে জটলা করে আছে। সেখানে গিয়ে দেখা গেল একটা মেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে। তার মুখে-চোখে জলের ছিটে দিয়ে জ্ঞান ফেরানো হয়েছে। কিন্তু সে অঝোরে কেঁদে চলেছে। তার হাত-পা কাঁপছে, আর বারবার রিমির নাম নিচ্ছে। এবার মিসেস রায় যেন হঠাৎ করে ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন তাকে নিয়ে, "কিছু হয়নি, কিচ্ছু হয়নি। সব ঠিক হয়ে যাবে" বলে কান্না থামানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু অদিতির একটু অবাক লাগল। তাই সে জিজ্ঞাসা করল, "কী হয়েছে? বারবার রিমির নাম করছ কেন?"
তখন মেয়েটি যা বলল তাতে সকলেরই গায়ে কাঁটা দিল, "রিমি.. রিমি এসেছিল। ওখানে দাঁড়িয়েছিল।


                                                  
                                                                          (........শেষ অংশ )

                                                                           - মনোজ রায়

" বড় দিনের উপহার - দ্বিতীয় অংশ " - মনোজ রায়



রবিনের ছোটবেলার ইচ্ছের কথা শুনে সত্যিই সবাই অবাক হয়ে গেল। প্রায় একসাথেই জিজ্ঞাসা করল সবাই, "মানে?"
রবিন : "ছোট বেলায় টিভিতে ওই প্যালেসটা বারবার দেখাতো এক্সিবিশনের সময়ে। তখন ওই প্যালেসটা দেখতাম আর  বাবাকে বলতাম,"বাবা একদিন ওই বাড়িটা আমার হবে আর তুমি ওখানে রাজা হবে।" বাবা হাসতো আর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতো, "বোকা ছেলে!! ওটা রাজাদের মহল। কোথায় ওরা রাজা আর কোথায় আমরা সাধারণ মানুষ। ওসব শুধু স্বপ্নতেই হতে পারে।"


নীল : "আরে..!! হতেই তো পারে এটা জাস্ট একটা কো-ইন্সিডেন্স। সত্যিই কেউ মজা করেছে আর কোনক্রমে ব্যাপারটা মিলে গেছে। নাহলে কোথায় অজিত সিংহ আর তুই কোথাকার রবিন.., তোর নামে এতো বড় একটা প্যালেস লিখে দেবে?"
মানালি : "শোন না!! গুগল এ একবার সার্চ করে দেখ না অজিত সিংহের নামে কিছু পাওয়া যায় কিনা।"
নীল : " হুমম স্মিতা একদম ঠিক বলেছে ,একবার সার্চ করে দেখ তো কিছু দেখায় কিনা।
রবিন টেবিলে রাখা ল্যাপটপটা অন করলো। গুগল সার্চ এ টাইপ করলো- "information about maharaja Ajit Singh , hajigarh" সেকেন্ডের মধ্যে ল্যাপটপের স্ক্রিনে ভেসে উঠল একটা তথ্য- " Today  morning (25 .12 .
2015 ), at 9.30 a.m, the  famous writer and painter Maharaja Ajit Singh has died. As he was the last person of Raja Bikram
Singh family, he has written all his property to an unknown

person before his death. No one know about that person except his advocate till now."
এটা দেখা মাত্র রবিনের হৃদস্পন্দনের বেগ  যেন আরো বেড়ে গেল। চেয়ার থেকে উঠে দৌড়ে গিয়ে দলিলটা হাতে নিয়ে দেখল তাতে অজিত সিংহের সই রয়েছে। আর নিচে লেখা তারিখটা ২৫/১২/২০১৬। এখন রবিনের মনে ভিড় করে এসেছে অনেক প্রশ্ন। সকলে মিলেও এই প্রশ্নের কোন সমাধান সূত্র খুঁজে পেল না। আনন্দ উল্লাসের সাথে পার্টিটা শুরু হলেও মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন নিয়েই সকলে রবিনের কাছ থেকে বিদায় নিলো। শুধু অরূপ বলল,"উইলটা ১০০% আসল। তবে তুই এনিয়ে বেশি চিন্তা করিস না। আমি একবার দেখব না হয় উইলটার ব্যাপারে খোঁজখবর করে।"

        অরূপ হাইকোর্টে চাকরি করে। তাই হয়ত এই আশ্বাসবাণী। কিন্তু রবিন কোনোভাবেই এই প্রশ্নগুলো থেকে নিজের মনকে আলাদা করতে পারছিলোনা। সেইসঙ্গে ওই চিঠির কথাগুলো রবিনকে ঘুমাতে দিচ্ছিল না। পরদিন সকালেও রবিন কাজে মন বসাতে পারল না। আগামীকাল একটা জরুরী কাজ আছে। কিনতু এই ধাঁধাঁর উত্তর খুঁজে না পাওয়া অবধি তার মনের অস্থিরতা কাটবে না। তাই আজকেই হাজিগড় যাবে ঠিক করল। কলকাতা থেকে হাজিগড় যেতে মোটামুটি দু-আড়াই ঘন্টা মত লাগে গাড়িতে। এখন বেরিয়ে পড়লে সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসতে পারবে। তারপরে কালকের কাজগুলো সারতে হবে। তাই আগে কিছু জরুরী ফোনকল করে নিল। তারপর রওনা হলো হাজিগড়ের উদ্দেশ্যে।

        হাজিগড় যেতে মোটামুটি দুটো জাতীয় সড়ক ক্রস করতে হয়- ১১৭নং আর ৬নং| তাই যানজটের ঝক্কি তেমন নেই। তাছাড়া, অঞ্চলটা একটু সবুজে ঘেরা। তারওপর আবার গন্তব্য রাজবাড়ি। মোটকথা, যাত্রার এই সময়টা মন্দ কাটল না ওর। হাজিগড় স্টেশনর কাছে এসে একজনকে জিজ্ঞাসা করে নিল প্যালেসে যাওয়ার রাস্তাটা। স্টেশান থেকে এই.. দু-মিনিট মত গিয়ে একটা বিরাট গেটের কাছে এসে দাঁড়াল। গেটের দুপাশে দুটি সাদা মার্বেলের হাতি। আর দুজন সশস্ত্র দারোয়ান। রবিনের গাড়ি এসে দাঁড়াতেই একজন বেরিয়ে এসে রীতিমত জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে
দিল-- "কী করেন","কোথায় থাকেন","কেন এসেছেন" আরো কত কী। কিন্তু যেইমাত্র শুনল যে রবিন প্রপার্টির ব্যাপারে কথা বলতে এসেছে,তৎক্ষণাৎ ওর ভেতরে প্রবেশ
নিষিদ্ধ হয়ে গেল। আসলে প্রপার্টি নিয়ে অজিত সিংহের এরকম একটা সিদ্ধান্তের জন্যই হয়ত এত কড়াকড়ি। তাই অনুরোধ করা সত্ত্বেও কোনোভাবেই ভেতরে যাওয়ার সুযোগ পেলোনা রবিন। অনেকরকমভাবে বোঝানোর চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর শুরু হল চিৎকার চেঁচামেচি। এর মধ্যেই একজন কাউকে যেন ফোন করল। একটু পরে একজন বয়স্কলোক বেরিয়ে এলেন।
--- "নমস্কার! আমি রাজবাড়ির দেওয়ান। কী প্রয়োজন বলুন।"
--- "আমি শুনলাম যে রাজাবাবু তাঁর সমস্ত সম্পত্তি কোন একজন অজ্ঞাত ব্যাক্তিকে দান করে গেছেন। একথা কী সত্যি?"
রবিনের মুখে একথা শুনে দেওয়ান জীর চোয়াল একটু শক্ত হয়ে গেল। বললেন, "কোন অজানা অচেনা ব্যাক্তির সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করা চলে না। এটা অত্যন্ত গোপনীয় বিষয়।"
---"জানি। কিন্তু কাল রাতে এটা আমি পেয়েছি", বলে রবিন ব্রিফকেস থেকে উইলটা বের করে দিল। দেওয়ানজী সেটা হাতে নিয়ে দেখে বুঝলেন উইলটা আসল। তখন রবিনকে ভেতরে আসতে বললেন। রবিন গাড়িটা গেটের বাইরেই পার্ক করে দেওয়ানজীর পিছু পিছু চলল। গেট দিয়ে ঢুকেই মোরাম বিছানো রাস্তা। দুপাশে সাজানো বাগান। মূল প্রাসাদের সামনে একটা ফোয়ারা। সেখানকার স্বচ্ছ জলে আধফোঁটা পদ্মরাশির মাঝখানে এক অর্ধনগ্ন এলোকেশীর প্রস্তরমূর্তি। মূর্তির চোখেমুখে এক অদ্ভুত স্নিগ্ধতা। মনে হয় যেন এই অষ্টাদশীর সৌন্দর্য আস্বাদনের জন্য সময় তার স্নানের মুহূর্তটিতেই স্থির হয়ে গেছে। ফোয়ারার পরে গাড়িবারান্দা। সেখানে খানচারেক গাড়ি দাঁড়িয়ে। গাড়িবারান্দা পেরিয়ে ওরা ঢুকল একটা বড় হলঘরে। হলঘরের ভেতর দিয়ে সিঁড়ি উঠে গেছে দুদিকে। সিঁড়ি বেয়ে উঠে অনেকগুলো ঘর পেরিয়ে একটা কোণের দিকের ঘরে গিয়ে ঢুকল দুজন। এটা একটা অফিস ঘরের মত। চারিদিকে থরে থরে কাগজপত্র রাখা। একপাশে গদি-আঁটা চৌকির ওপর একটা নীচু টেবিল। অন্যপাশে গুটিকতক গদি-আঁটা চেয়ার।

দেওয়ানজী আমাকে সেখানে বসতে বললেন। তারপর কথা শুরু করলেন, "গোড়া থেকে আমাকে ঘটনাটা খুলে বলুন তো।"
সেদিন রাতে যা যা হয়েছিল সবকিছু খুলে বলল রবিন। সেইসঙ্গে ওই চিঠিটার কথাও বলল। সব শুনে দেওয়ানজী বললেন, "কিন্তু আপনি যে সত্যিকথা বলছেন তার কী
প্রমাণ আছে?"

রবিন একটু ঘাবড়ে গেল। তারপর একটু সামলে নিয়ে বলল,"দেখুন, আমার এই
প্রপার্টির ওপর কোন লোভ নেই। আপনি যদি ওই চিঠিটার কথা বলেন, তবে বলব ছোটবেলায় এরকম দু-একটা অদ্ভুত ইচ্ছা সকলেরই থাকে। সেটাকে সত্যি ভেবে

নেওয়ার কোন মানে হয়না। যদিও ওই চিঠিটা আমাকেও অবাক করেছে, কারণ তাতে লেখা কথাগুলো সত্যি। আর আপনি যদি এটা বলতে চান যে এটা জাল উইল তবে বলব, সেটা হতেই পারে। কারণ আমাকে কেউ নিজে হাতে করে এটা দেয়নি। তবে এবিষয়ে আমার ওপর সন্দেহ করা অমূলক। কারণ রাজাবাবু কাল সকালেই মারা গেছেন। সেই খবর শোনার পর একবেলার মধ্যে নিশ্চই আমার পক্ষে জাল উইল তৈরী করা সম্ভব নয়।"
---"হমমম..!!
--- "আর তাতেও আপনার সন্দেহ না কাটলে আপনি নিজে এই উইলটা যাচাই করে নিতে পারেন কিংবা এই চিঠি" এই বলে রবিন চিঠিটা বের করে দেওয়ানের হাতে দিল। তারপর বলল,"আচ্ছা.. ওই চিঠির লেখাটা কী রাজাবাবুর হাতের লেখা বলে মনে হয় আপনার?"
---"হ্যাঁ।"
---"কিন্তু..."
---"তোমার নাম কী?"
---"রবিন.. রবিন ডি'সুজা।"
---"তোমার বাবার নাম?"
---"আর্ভিন ডি'সুজা।"

রবিন লক্ষ্য করল তার বাবার নাম শুনে দেওয়ানজী যেন চমকে উঠলেন। তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন,"তোমার মা কী সারা?"
দেওয়ানের কথা শুনে রবিন অবাক হয়ে গেল। তারপর বলল,"আপনি আমার মাকে চেনেন?"
---"এই উইল রাজাবাবু তোমাকেই পাঠিয়েছেন রবিন। এখন এই প্যালেসের একমাত্র উত্তরাধিকারী তুমি।"
                                                            
                                                        (........পরবর্তী অংশ  )


                                                                      - মনোজ রায়

" নাম " - সঙ্ঘমিত্রা প্রামাণিক চ্যাটার্জ্জী


       তানিয়া তার মেয়ের নাম রেখেছিল "শুভলক্ষ্মী"। এমন সুন্দর নাম শুনে সকলেই অবাক হয়ে যায়। নামটা একবার বলার পর পুনরায় শুনতে চায় লোকজন। কারণ এ নাম বেশি শোনা যায়না। 'শুভ'  নামও শোনা যায়,আবার 'লক্ষ্মী' ও অনেকেরই নাম হয়। কিন্তু ঐ দুটো শব্দ জুড়ে দিয়ে "শুভলক্ষ্মী" সে ভাবে শোনা যায়না। তানিয়া যখন স্কুলে পড়তো, তখন তার ক্লাসে তার সঙ্গেই একটি মেয়ে পড়তো। তার নাম ছিলো "শুভলক্ষ্মী"। মেয়েটি ছিলো যেমন রূপবতী, তেমনই লেখাপড়া,নাচ,গান,খেলাধূলা সবেতেই ছিলো এক নম্বর। প্রতিবছর ক্লাসে প্রথম হতো। তার ব্যবহার সকলের মন ছুঁয়ে যেতো। মেয়েটির পুরো নাম ছিলো শুভলক্ষ্মী মুখোপাধ্যায়।

        মেয়ের "শুভলক্ষ্মী" নাম রাখার পেছনে তানিয়ার অনেক আশা আকাঙ্খা জড়িয়ে ছিলো। অবচেতন মনে সে ভেবেছিল তার গর্ভজাত সন্তানও ঠিক ঐ শুভলক্ষ্মী মুখোপাধ্যায়ের মতোই যেন সর্বগুণসম্পন্না হয়ে ওঠে। এককথায়, মনে মনে সে তার ক্লাসের প্রতি বছর প্রথম হওয়া ঐ মেয়েটির মতোই তার মেয়েও হবে, এটা আশা করতো।

       তানিয়া বহুদিন পর তার বাপের বাড়ি খড়গপুরে গেছে। কয়েকদিন সেখানে থাকবেও ঠিক করেছে। ভাইয়ের বউয়ের সাথে শপিং করতে বেড়োলো একদিন। রাস্তায় হঠাৎ তার এক সহপাঠিনী মিতার সাথে দেখা হয়ে গেলো। প্রায় পনেরো বছর বাদে মিতার সাথে তানিয়ার দেখা হলো। নানা গল্প আর কথার মাঝে হঠাৎ তার ক্লাসের প্রতি বছর প্রথম হওয়া সর্বগুণসম্পন্না শুভলক্ষ্মী মুখোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ উঠতেই মিতা বলল—"শুভলক্ষ্মী!বাব্ব!! সে যা করল শেষ পর্যন্ত। কলেজও পাশ করলো না। পড়তে পড়তেই এক মুসলিম ছেলের সঙ্গে প্রেম করে পালিয়ে গিয়ে তাকে বিয়ে করে বসলো। কানাঘুষো শুনেছি,

বিয়ের আগেই তার ও সব গল্পও হয়ে গেছিলো। ছ্যাঃ ছ্যাঃ!!কী নোংরা মেয়ে রে বাবা!!"

শুভলক্ষ্মী মুখোপাধ্যায়ের স্কুলের পরের জীবনের কথা শুনে "শুভলক্ষ্মী"র মা তানিয়া মাথা বন্ বন্ করে ঘুরতে লাগলো,দর্ দর্ করে ঘামতে থাকলো সে। সে সবসময় ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে এসেছে তার ক্লাসের সেই শুভলক্ষ্মী মুখোপাধ্যায়ের মতোই যেন তার মেয়ে হয়। মিতার কাছে ওই সব শুনে সে মনে মনে বলে উঠলো,"হে ভগবান এবার কী হবে?"



                                                           - সঙ্ঘমিত্রা প্রামাণিক চ্যাটার্জ্জী

" বেলাশেষে " - অয়ন মন্ডল


      গোছগাছ পর্বটা প্রায় সেরেই ফেলেছেন অনিমেষবাবু। চশমাটা ডেস্কে রেখে নির্নিমেষ তাকিয়ে রইলেন জানালার ওপারে, কিছু যেন ধাক্কা দিচ্ছে। ওখানের জল-হাওয়া কেমন সেটাও ভাবতে হচ্ছে। অভিরুপ এবং বৌমা দুজনেই অবশ্য আশ্বস্ত করেছে। তবু এখানকার বন্ধুদের ভোলা সম্ভব না তাঁর পক্ষে, তা সে যতই বৃদ্ধাবাস হোক।
—- "ওষুধগুলো নিয়েছো?" মাধবীদেবীর প্রশ্নে সম্বিৎ ফেরে তাঁর।
—- "হ্যাঁ, নিলাম তো।"
—- "থাক!! যা অগোছালো তুমি, কিভাবে যে তোমার বউ মানিয়েছিলো তোমার সাথে কে জানে!!"
—- "হ্যাঁ সবই ওর গুণে। সহমত হন অনিমেষবাবু।
 মাধবীদেবীর সাথে এখানেই আলাপ অনিমেষবাবুর। বেশ মিষ্টি, নরম গোছের এবং গোছানো। মধ্য সত্তরের তারুণ্য হার মানে মাধবীদেবীর কাছে, বয়সের তেমন ফারাক নেই বলেই হয়তো। ছেলে-বৌমার তাঁকে এখানে রেখে যাওয়ার দিনটা এখনো মনে করতে পারেন অনিমেষবাবু। চোখটা ভিজে ওঠে। আজ তারাই...... !!! তবু তাদের কাছে ফেরাটা যেন গৌণ আজ। আনন্দটাও ফিকে।
        সবাই অপেক্ষারত বিদায় জানাতে। সবাইকে বিদায় জানিয়ে এলেন মাধবীদেবীর কাছে। চোখে ধরে রাখা জলটা এতক্ষণে নদী হলো। কিছু নীরব অভিব্যক্তি কথা বলতে চাইল যেন।
ওদের কাউকে আসতে মানা করেছেন। নিজেই যাবেন, একা। স্টেশনে পৌঁছাতে ঘন্টাখানেক।
  পৌঁছে অনভ্যাসের ফোনটায় একবার হাত বুলোলেন বেঞ্চিতে বসে।
"জন্মদিনে উপহার দিয়ে ব্যবহার করাটাও শিখিয়েছিল মাধবী", মনে মনে বললেন তিনি।
"আবার একবার নিশ্চয়ই দেখা হবে" হঠাৎ একটা মেসেজ মাধবীদেবীর।
রাজধানী এক্সপ্রেসটা বেরিয়ে যাচ্ছে স্টেশন ছেড়ে। বেঞ্চিতে বসে তার দিকে তাকালেন অনিমেষবাবু, মনে বাজছে "আবার একবার নিশ্চয়ই দেখা হবে।"
"সারা জীবনের জন্য" অস্ফুটে বললেন তিনি।



                                                                 - অয়ন মন্ডল

" কর্তব্য " - সুফি রায়

      
     বিয়ের একবছরের মধ্যেই শাঁখা-সিঁদূর খুইয়ে বসল মেয়েটা। এখনো একটা ছেলেপুলেও আসেনি ওর ঘরে। তাই এই সময় বড়ো জা বিমলা আর ভাসুর সুধাংশুই ওকে মনোবল জুগিয়েছে। একদিন সুধাংশু সকলের সামনেই ছোট ভাইয়ের বউকে আশ্বস্ত করেছিল, "কোন চিন্তা কোরো না। হয়ত সব সুখ তোমাকে দিতে অপারগ; কিন্তু আমার সাধ্যমত তোমার প্রতি কর্তব্য পালন করব।"
       এর উত্তরে রমিতা সেদিন কি বলেছিল জানিনা। কিন্তু কিছুদিন যাবৎ গভীর রাতে বিমলার বিছানা আংশিক ফাঁকা হয়ে যায়। আর বন্ধ দরজার ভেতরে পূর্ণতা লাভ করে রমিতা।




                                                                                -  সুফি রায়

" নু ইয়ার " সুফি রায়

—-"হ্যাঁ রে পল্টু!! আজজে রাস্তাডা এত্ত সাজাইছে কেন রে?"
—-"উ বড়লোকগুলানের 'নু ইয়ার' আছে রে কাইলকা।"
—-"নু ইয়ার' কী লো?"
—-"লতুন বচ্ছররে উই বড়লোকগুলান 'নু ইয়ার' কয় রে নক্ষী। সব রাস্তা আলো দে সাজায়, আর মুর মা যেখেনে কাম করে সেখেনে যায়্যা তোর বাপের মত ভরপেট্টা গিলে লাচা-গানা করে। মুই সেই সেবারে দেখেছিলাম।"

'মা তারা হোটেল'এর বাসনগুলো মাজতে মাজতে লক্ষী ভাবে, "আজজে বাড়ি ফিরে পটলার মায়রে জিগামু আমাগো 'নু ইয়ার' কবে আসে। আমাগো ঘরের সামনেডা কবে সাজাইব। মুর বাপ তো রোজ গিলে আসে। তাই বুঝিনা আমাগোডা কবে।"



                                                                   - সুফি রায়

" বিভেদ " - অয়ন মণ্ডল


আসন্ন রাত, বাজে গুঞ্জনের প্রহর,
গুঞ্জন নয় ঠিক, প্রেমের ষড়যন্ত্র ;
সংক্রামিত বাতাস ভালবাসার রূপে,
মৃত্যুবরণে রাজি আমি এমন পবিত্র রোগে।
চক্রান্তের গন্ধ যদি, ব্রুটাস যদিওবা হয়,
আমি জুলিয়াস, এক জীবন্ত অধ্যায়।
নয় বীভৎসতা, জানি প্রেমের ফুলেই মালা ;
ছিঁড়োনা পাপড়ি, কষ্টে গড়ে তোলা।
এ সাম্রাজ্যে সম্রাট আমি, রইব অমর হয়ে;
তুমি হোয়ো বেগম ধর্মান্তরিত হয়ে।

   
                
                           - অয়ন মণ্ডল

" বধুঁ " - সুফি রায়


আমার মুঠোয় তোর হাতটা
পরেও থাকবে তেমনি ধরা,
যেমন থাকে মেঘের বুকে
চাঁদের কণা আড়াল করা।

আমার রাতের আকাশটাতে
থাকিস হয়ে সন্ধ্যাতারা-
ভোরেরবেলায় ডাকব যখন
আসবি সেজে শুকতারা।

বিকেলবেলায় একলা উদাস
থাকব যখন আনমনায়;
তোর হাতের ছোঁয়ায় চল না নিয়ে
সাগর পাড়ের রূপকথায়।

থাকুক পড়ে হিসেব-নিকেশ,
হাট-বাজারের দামাদামি-
ডুব সাঁতারে প্রেমের আকর
চল না তুলি- তুই আর আমি।

থাক না বধুঁ আমার হয়ে,
তোর হাতটা থাকুক মুঠোয় ধরা;
যেমন থাকে আগুনশিখা
দীপের বুকে আড়াল করা॥
                                    

                          -- সুফি রায়

" তোর সুর " - অয়ন মণ্ডল


আমার সুরে গান নাই'বা হলি,
তোর সুরে গাইতে আমায় নিস।
যত্নে আমি গাইব ইচ্ছেতে তোর;
রাগের প্রকোষ্ঠে অভিমান, আঁধার করে ভোর।
শুধু থাকবে ভালোবাসা,না হয় ছড়িয়ে ছিটিয়ে
করে নিস একজোট আদরের আবদারে।
আকাঙ্খা কিছু বাস্তবের আশায়, ব্যস্ত দিনক্ষণ ;
তোর অনুভূতি চড়া সুরে বাঁধা, কাঁদে পঞ্চম।


                                 


                                  - অয়ন মণ্ডল

" SNIPER " - রণবীর বন্দ্যোপাধ্যায়


চেয়ে আছি অনেক দূরে.. একদৃষ্টে,
চোখে আসে না কখনো ঘুম-
চোখটা আছে নিখুঁতভাবে Align করা
Backsight U r Foresight Knob-এর সাথে-
আমি SNIPER..।

Trigger-এর ওপর রেখেছি আঙ্গুল,
নিমেষে ছুটে যেতে পারে
একটা Bullet.. আমার Rifle থেকে।
একটা প্রাণ নিতে পারে
এই পৃথিবী থেকে.. একটা বুলেট !

একটা Bullet ছুটে আসতে পারে আমারও দিকে !
Rifle ছিটকে যাবে হাত থেকে-
নিথর শরীরটা তারপর
ঢুকে যাবে Coffin -এর ভিতর !

Coffin টা পৌঁছে যাবে
শান্ত ছায়াঘেরা আমার গ্রামে;
আর Coffin মধ্যে আমি
ফিরে আসব আমার পৃথিবীতে।

মেয়েটা, বউটা উন্মাদ চিৎকারে
মাতিয়ে তুলবে পাড়া... ছেলেটা হয়ত
পুকুরের ঘাটে চুপচাপ.. নীরব;

নীরব হয়ে যাবে.. আস্তে আস্তে আবার
সব চিৎকার আর কান্না।

তবুও Trigger -এ আছে আমার আঙ্গুল,
চোখটা Align করা
Backsight U ar Foresight Knob এর সাথে-
জীবন রক্ষায়... জীবন দিয়ে...
জীবনকে কেড়ে নিতে
নিশিদিন.. প্রতিদিন..।

SNIPER আমি অচঞ্চল-
দেশ থেকে দেশান্তরে
জীবন দিয়ে, জীবনের প্রয়োজনে !!

                                           

                              - রণবীর বন্দ্যোপাধ্যায়

" বৈষ্ণব কবিতা " সুফি রায়


[ অযথা বিনয় নয়। আসলে, বৈষ্ণব কবিতা লেখার কোন যোগ্যতাই আমার নেই। সে চেষ্টা করার মত দুঃসাহসীও নই। তবু মনের খেয়ালে কলম চলেছে। বৈষ্ণব কবিদের সাথে তুলনা না করেও যদি মতামত দেন, ভালোলাগবে। ]

আমার হিয়ার মাঝে ব্যাথা বাজে
তোমার বাঁশির করুণ সুরে,
তোমার প্রেমের স্রোতেই মন ভাসালেম
তোমার সুরেই আমার কপাল পুড়ে।

আমার ব্যাকুল মনের যত কথা
সদাই যেন তোমায় খুঁজে;
আমার সাধন-ভজন চুলোয় গেল
কালাচাঁদের চরণ পূজে।

আমার মনের নাগর,প্রাণের সখা-
কিসের লাগি কান্দাও এমন?
অভিমানে রাই যে পুড়ে
পঞ্চদীপে কর্পূর যেমন।

আন্ধার হল সুয্যি ডোবে-
আমার মনেও আন্ধার করে;
আমি কুঞ্জতলে প্রহর গুনি
মদন চলে সতীন ঘরে।

সতীন পুরে বাতির আগুন,
সেই আগুন মোর হৃদয়ে ধরে;
শ্যামের বুকে সোহাগ-নিশান
রাধার বুকে রক্ত ঝরে।

রাই কহে,আমি প্রাণের বেদন বোঝাই কারে
কানুই যখন আঘাত করে-
কালার প্রেম যে বিষম-ফাঁদ
মরেছি পীরিতি জ্বরে॥

                

                       -- সুফি রায়

" রাতের অতিথি " - অয়ন মণ্ডল


গভীর রাতের অতিথি তুমি যেন আততায়ী;
হত্যা তোমার কল্পনায়, আমি পরিযায়ী।
খুঁজছো আমায় ঘরে যত্নে পরিপাটি;
মৃত্যু শ্রেয় তোমার হাতেই, চেষ্টা নেহাতই চেষ্টা,
কোরোনা হত্যা; এসো এই অবকাশে
করি আলাপ-পরিচয় ছাপোষা এই মধুমাসে।
দাঁড়িয়ে আছি যেন মূর্ত প্রতীক হঠাৎ
তীর বেঁধা, সইব আঘাত হয়তো হয়ে বোবা।
মাধুর্য্য তোমার এহেন করি হত্যা তুলনা,
যদিওবা করো হত্যা কখনও ফিরতে ভুলোনা॥

                                  

                                  - অয়ন মণ্ডল

" স্কুল বেলা " - সঙ্ঘমিত্রা প্রামাণিক চ্যাটার্জ্জী



চল্ যাবি? আবার যাবি সেই ছাতিম গাছের তলে—
যেখানে রোদ্দুর আর বন্ধুরা মিলে ইচিংবিচিং খেলে?
যাবি বল্ —সেই ছাতিম গাছের তলে।
চল্ যাই, সেই মাঠটায় বসে তোর রুটির টুকরো খাবো
আমার টিফিনে যা আছে তা তোকেও ভাগ দেবো।
যাবি বল্ —ঐ স্কুলের মাঠের সবুজ ঘাসের কোলে।
চল যাবি?আবার যাবি সেই ছাতিম গাছের তলে—
শীতাতাপ রেস্তোরাঁ কী সত্যি সবার চাওয়া?
কাবাব,চিকেন,তন্দুরী কী ইচ্ছে আসল খাওয়া?
আসলে হাতড়ে হাতড়ে জড়াতে চাই সময়টাকে পেলে,
ডাকছে দেখ পাতা গুলো, ডাকছে শাখা মেলে-
চল, আবার হারিয়ে যাই ইচিং বিচিং দলে ঐ গাছটার তলে।

                 

                                                - সঙ্ঘমিত্রা প্রামাণিক চ্যাটার্জ্জী

" বড় দিনের উপহার - প্রথম অংশ" - মনোজ রায়

আজ ২৫ শে ডিসেম্বর,মানে বড়দিন।
রবিন তার পাঁচজন বন্ধুদের বাড়িতে ইনভাইট করেছে। এবছর সকলে মিলে অন্য কোথাও গিয়ে সেলিব্রেট করার প্ল্যান ছিল। কিন্তু রবিন আজকের দিনটা বাড়িতেই কাটাতে চায়। রনি, স্মিতা, অরূপ, নীল, মানালি- এই পাঁচজন রবিনের খুব ভালো বন্ধু। সেই স্কুল লাইফ থেকেই।  একসাথেই স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি পার করেছে। বর্তমানে রনি আর স্মিতা চাকরি করে একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে, একসাথে। নীল আর মানালি একটা IT  কোম্পানিতে চাকরি করছে। একমাত্র অরূপই একটা সরকারী চাকরি করছে- হাইকোর্টে, ক্লার্ক। আর রবিন তার পারিবারিক বাবসাটাকে আরো উঁচু একটা জায়গায় নিয়ে গিয়ে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে চায়। বাবা-মা দুবছর আগেই একটি দুর্ঘটনাতে মারা যায়। পরিজন বলতে এক কাকু, পরিবারের সাথে আমেরিকাতে থাকে। ওই ফোনে মাঝে সাঝে কথা হয়; বারবার বলে আমেরিকা চলে যেতে। কিন্তু রবিন তার পরিবারের এই স্মৃতিগুলোকে ছেড়ে কোথাও যেতে চায়না। একাই থাকে বাড়িতে। কখনো কখনো সব বন্ধুরা একসাথে মিলে পার্টি, গেট টুগেদার হয়। এদেরকে পেয়ে নিজেকে কখনো একা অনুভব করে না রবিন।

        রবিনের পুরো নাম রবিন ডিসুজা, অর্থাৎ খ্রিস্টান। তাই প্রতি বছর এই ২৫ শে ডিসেম্বর সবাই একসাথে দিনটাকে উপভোগ করে। সবাই এসে গেছে রবিনের বাড়িতে। রবিন বেশ ভালোই সাজিয়েছে নিজের বাড়িটাকে। খ্রীষ্টমাস ট্রি টাও খুব সুন্দর সাজিয়েছে। সবাই মিলে বসে স্ন্যাক্স, ড্রিঙ্কস, গল্প, হৈহুল্লোর হচ্ছিল, সাথে মিউজিক সিস্টেমে গান। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ রনি বলল, "রবিন!! গেটে কেউ এসেছে মনে হয়। কলিং বেলের আওয়াজ পেলাম।"
রবিন : "কোথায় আওয়াজ? আমি কোনো আওয়াজ পেলাম না তো!!"
অরূপ : "না রে!! আমিও শুনতে পেলাম।"
রবিন মিউজিক সিস্টেমের ভলিউমটা কম করে দিলো। একটু পর আবার বেল বেজে উঠলো।
রবিন : "আচ্ছা আমি দেখছি, তোরা এনজয় কর।"

রবিন গেটের দিকে এগিয়ে গেলো। কিন্তু বাইরে তো কেউ নেই। এদিক ওদিক ভালো করে দেখে নিয়ে কেউ বাদমায়েসি করেছে  ভেবে দরজাটা বন্ধ করতেই যাবে, দেখলো পায়ের কাছে একটা গিফট বক্স।
বাক্সটা দেখে একটু বেরিয়ে এসে আবার এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো। কিন্তু দূর দূর পর্যন্ত কারোর ছায়াটুকু দেখতে পেলো না। বাক্সটা হাতে নিয়ে গেট বন্ধ করে ভেতরে চলে এল। কিন্তু চোখে মুখে চিন্তার ছাপ।
অরূপ : "কি হলো রে? কে ছিল? আর এটা কি?"
রবিন : " আমি নিজেই বুঝতে পারছিনা বাইরে কে ছিল আর বাক্সটা কে দিয়ে গেলো। শুধু এটাই বাইরে রাখা ছিল।"
রনি : "আজকে তো বড়দিন। তাই হয়তো কেউ সারপ্রাইজ গিফট দিয়েছে তোকে।"
স্মিতা : " যদি কেউ গিফট দিতে আসে তাহলে এভাবে দিয়ে পালাবে কেন? আর কুরিয়ার সার্ভিসের লোক এলে তো সেটা হাতেই দিতো।"
রনি : "হতে পারে অনেকক্ষণ থেকে বেল বাজাচ্ছিল আমরা শুনতে পাইনি। তাই দিয়ে চলে গেছে।"
রবিন : " কিন্তু কোনো কুরিয়ার যদি দিতো তাহলে তো কুরিয়ার সার্ভিসের নাম থাকতো। এখানে তো কিছুই লেখা নেই।"
মানালি : " আরে এতো কেন চিন্তা ভাবনার কী আছে। বাক্সটা খুলেই দেখ না কি আছে।"

        রবিন বাক্স টা খুলে ফেলল। দেখলো তার মধ্যে কিছু কাগজ-পত্র রাখা আছে সাথে একটা খোলা চিঠি....

" প্রিয় রবিন ,
     তোমার সেই ছোটবেলার একটা চাওয়া ছিল যেটা আজকে পূরণ করলাম। আমার পক্ষ থেকে তোমার বড়দিনের উপহার।
                                                             ভালোবাসার সাথে,
                                                                 -সান্তাক্লজ "

চিঠিটা পরে সবাই বলল, "দেখলি তো, বললাম কেউ গিফট দিয়েছে তোকে।"
রবিন : " কিন্তু এই কাগজ গুলো কীসের? এটা কেমন গিফট?"

রবিন কাগজটা হাতে নিয়ে দেখল সেটা একটা দলিল। কিনতু দলিলটা পড়ে সে অবাক হয়ে গেলো। এর ওর মুখের দিকে তাকাতে লাগলো। ওর ভাব দেখে সকলেই একদম চুপ মেরে গেছে।
স্মিতা : "কী হলো রে? কি লেখা আছে ওতে?"
রবিন তখনো বিস্ময়ের ঘোরটা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। স্মিতা দলিলটা রবিনের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে পড়তে লাগল। আর তারপর জোরে জোরে হাসতে লাগলো। এবার সকলেরই কৌতুহল হচ্ছে।
স্মিতা : " এতে লেখা আছে হাজিগড়ের রাজা অজিত সিংহ তাঁর প্যালেসটা রবিনের নামে লিখে দিয়েছে। এখন থেকে রবিনই সেই প্যালেসের মালিক।"
মানালি : "হাজিগড়ের অজিত সিংহ?"
রবিন : হুমম!!
এবারে স্মিতার সাথে আর সকলেই হাসিতে ফেটে পড়ল। কিন্তু রবিন সকলের সাথে হাসিতে যোগ দিতে পারছিল না। সে বলল, "চুপ কর!! এটা কি এপ্রিল মাস নাকি যে এপ্রিল ফুল করবে আমাকে?"
অরূপ : "আরে বাবা.. রাজত্ব না থাকলেও তো অজিত সিংহ একজন রাজা-ই। আর রাজা না হলেও একজন বিখ্যাত রাইটার, পেইন্টার। রীতিমত সেলিব্রিটি। তাঁর এতবড় প্যালেস শুধু শুধু তোর নামে করবে কেন? কেউ মজাই করেছে (হাসতে হাসতে)।"
রবিন একটু গম্ভীরভাবে বলল, "কিন্তু তোরা চিঠিটা একবার ভালো করে পড়, লেখা আছে ....'তোমার সেই ছোটবেলার একটা চাওয়া ছিল যেটা আজকে পূরণ করলাম। '...আমার ছোটবেলার কোনো চাওয়া অন্য কেউ কী করে জানতে পারে? আর এটা সত্যি যে ছোটবেলায় আমি ওই প্যালেসটার মালিক হতে চাইতাম।"

                                                          (........পরবর্তী অংশ  )

    
                                                                   - মনোজ রায়

" রিমির মৃত্যু রহস্য - প্রথম অংশ " - মনোজ রায়

সকাল সকাল স্নান সেরে লালপাড় হলুদ শাড়িটা পড়ে তৈরী হয়ে নিল অদিতি। তারপর পুজোর থালা হাতে বেরিয়ে পড়ল মন্দিরের দিকে।
-- "পুজোটা দিয়ে দেবেন ঠাকুরমশাই।"
-- "এবছরও পুজো দিচ্ছ মা?"
-- "আজকের দিনটা আমি কি করে ভুলি বলুন তো? ও থাক আর না থাক, যতদিন আমি থাকব এই দিনটাতে ওর নামে পুজো হবেই।"

        অদিতি প্রতিবছর এইদিনটাতে রিমির নামে মন্দিরে পুজো দেয়। আজ রিমির জন্মদিন। অদিতির বোন রিমি। মা-বাবা মারা যাওয়ার পর দিদি অদিতিই রিমির সব। অদিতির বিয়ে হয়ে গেছে। রিমি এখন কলেজে পড়ে। কলেজে ওঠার পর ও কলেজ-হোস্টেলেই থাকত। থাকত.., কারণ এখন থাকে না। গত দুমাস ধরে ওর কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। সমস্ত পরিচিতদের বাড়িতে খোঁজ না পাওয়ায় পুলিশে খবর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতেও কোন লাভ হয়নি। "কোথায় যে গেল মেয়েটা!! কি এমন হল যে ও আমাকেও বলে গেল না। তুই ফিরে আয় বোন, ফিরে আয়। তোর দিদি তোকে খুব মিস করছে রে!!" মন্দিরে বসে রিমির কথা ভাবতে ভাবতেই অদিতির চোখ থেকে জল পড়তে লাগল। কিছুক্ষণ মন্দিরে বসে তারপর বাড়ির দিকে রওনা হল। অদিতি গাড়ি নিয়ে এসেছে। নিজেই ড্রাইভ করে। কিনতু কিছুটা যাওয়ার পরেই, "দিদি!! দিদি!!" একটা চেনা ডাকে জোরে ব্রেক কষল অদিতি। তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে দেখল একটি মেয়ে দৌড়ে আসছে। আরে এটা তো.. অদিতি দুহাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আর মেয়েটিও ঝাঁপিয়ে পড়েছে তার দিদির বুকে। প্রাথমিক আবেগ কেটে যাওয়ার পর তারা গাড়িতে উঠে চলে গেল। কত হাসি-কান্নার রোল উঠল তাদের মনে। তবু তাদের কথা যেন আর ফুরোতে চায় না। তারপর দুপুরে কিছু খেয়ে দুজনে আবার বেরিয়ে পড়ল গাড়ি নিয়ে। এবারের গন্তব্য রিমির হোস্টেল।

        রিমির কলেজ বাড়ি থেকে প্রায় ১৫০ কি.মি.। অনেকটা সময়ের ব্যাপার। তাই বাড়ি থেকে যাওয়া আসা না করে হোস্টেলে থাকে রিমি। হোস্টেলটা কলেজ ক্যাম্পাসেই, পিছনের দিকে।
-- "তুই গাড়িতে বসে থাক। আমি হোস্টেল-ইন-চার্জকে বলে সব জিনিসপত্র বাড়ি নেওয়ার ব্যবস্থা করে আসছি।" এই বলে অদিতি সোজা ইনচার্জ-এর  রুমের দিকে চলে গেল। রিমির এই কলেজে ভর্তির সময় অদিতি এসেছিল। এছাড়াও কয়েকবার কলেজে, হোস্টেলে এসেছে এর আগে। পরীক্ষার সময় পড়ার চাপ থাকলে বা অন্য কোন কারণে রিমি বাড়ি যেতে না পারলে তখন অদিতি এসে বোনের সাথে দেখা করে যেত। কিছু দরকার থাকলে কিনে দিয়ে যেত। তাই এই কলেজের সবকিছু তার জানা। তাই হোস্টেল-ইন-চার্জও ওকে ভালমতোই চেনেন।
-- "আসতে পারি ?"
-- "আরে মিসেস ব্যানার্জি!! আসুন। বলুন।"
-- "আসলে আমি এসেছি রিমির জিনিসপত্রগুলো নিয়ে যেতে।"
-- "ও হ্যাঁ..। ওগুলো তো এখনো রয়ে গেছে। সব তেমনভাবেই রয়েছে। আপনি নিয়ে যেতে পারেন।" তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, "সে তো আর ফিরে আসবে না। জিনিসপত্রগুলো...."
-- "এরকম কেন বলছেন? ও তো ফিরে এসেছে। এখানেও এসেছে আমার সাথে।
কথাটা শুনে মিসেস রায় (ইন চার্জ) একটু থতমত খেয়ে গেলেন। অবাক হয়ে অদিতির দিকে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ।
-- "কি হলো ম্যাডাম ?"
-- "না মানে.., রিমি আপনার সাথে এসেছে?"
-- "হাঁ আমার সাথেই এসেছে। ও গাড়িতে অপেক্ষা করছে। এতদিন পর ফিরেছে, তাই বললো আপনার সাথে কথা বলে ওর জিনিসপত্রগুলো নিয়ে নিতে আর আপনাকে যেন বলে দি যে ও এখন আর আসবেনা এখানে। আমিও আর জোর করলাম না।
-- "আপনি ওকে ফোন করে এখানে আসতে বলতে পারবেন?" একটু ইতস্ততভাবে জিজ্ঞাসা করলেন মিসেস রায়।
-- "হ্যাঁ!! এক মিনিট, ডাকছি ওকে। ওর কাছে তো কোনো ফোন নেই। আমি ডেকে আনছি।"
-- "না দাঁড়ান। আমিই আসছি আপনার সাথে। "
গাড়ির কাছে এসে অদিতি বলল, "রিমি.. এইযে ম্যাডাম এসেছেন তোকে দেখবেন বলে।" কিন্তু গাড়ির ভেতর উঁকি মেরে দেখে কেউ নেই।
"কোথায় গেলো রিমি..?? এইতো একটু আগেই ছিল এখানে। আমাকে বললো অপেক্ষা করবে.., হয়তো ওর বান্ধবীদের সাথে দেখা করতে গেছে। একটু অপেক্ষা করুন, এক্ষুণি চলে আসবে।"
-- "আপনি ভুল দেখেছেন মিসেস ব্যানার্জী। এ হতে পারেনা। ও আসতেই পারেনা। "

                      

                                                                                                               (......পরবর্তী অংশ  )
                                                                                                                            - মনোজ রায় 

" আপন জন " - সঙ্ঘমিত্রা প্রামাণিক চ্যাটার্জ্জী

           মেয়েটা বড়ই ছোট। বয়স মাত্র আড়াই। এর মধ্যে ট্রান্সফার। ওয়েস্ট বেঙ্গলে ভরসা একমাত্র দিদির বাড়ি। দিদিকে ফোনে জানিয়ে দিলো সে। স্ত্রী আর মেয়েকে নিয়ে ফিরবে। তারপর কদিন সেখানে থেকেই কলকাতায় যাবে অফিস করতে। যতদিন না একটা মাথা গোঁজার ব্যবস্থা হয় ততদিন থাকবে। যথাসময়ে পৌঁছলো দিদির বাড়ি। দিদি ভাইকে এত বছর পর দেখেও খুশি হওয়ার বদলে চিন্তিত। মনে মনে ভয়। মনের ভয় ব্যবহারে বারবার প্রকাশিত হতে লাগলো।
—- "তোরা কতদিন থাকবি ঠিক করেছিস?"
—- "যতদিন না একটা বাসা ভাড়া পাই। আসলে বাচ্চাটা ছোট, আর আমার বউটাও তো বড্ড ছেলেমানুষ। তাই....."
মুখের কথা ছিনিয়ে নিয়ে দিদি বলল, "ও তার মানে বাচ্চা বড় করে যাবি ঠিক করেছিস? দেখ আমার ছেলে মেয়ের কলেজ থাকে,আমার অফিস থাকে। বাড়িতে প্রচুর কাজ। কাজের লোকও পাওয়া যায়না।যতদিন থাকবি তোর বউ কে কিন্তু কাজে হেল্প করতে হবে।"
—- "হ্যাঁ দিদি নিশ্চয়ই করবে।"
শুধু কাজে সাহায্য করা নয়, একেবারে বাড়ির কাজের লোক হয়ে উঠলো ননদের পরিবারের। সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টে চাকরী করা স্বামীটি সারাদিন বাদে বাড়ি ফিরে আসার পর এককাপ চা দিতেও বউটিকে ঐ বাড়ির লোকের পারমিশান নিয়ে চলতে হতো। নিজেদের ময়লা জামা-কাপড়গুলো কাচার জন্য সার্ফ খুঁজে না পেলে ননদের কাছে সার্ফ চাইতে অফিস থেকে ফ্রীতে পাওয়া সোডা দেওয়া হতো তাকে। স্বামী এ সব শুনে সার্ফ কিনে এনে দিতে গেলো স্ত্রী এর হাতে। ননদের চোখে পড়লো ওমনি সে বলে উঠলো,
"হুম্ বেশি পাকামো!!! লোকে কী বলবে আমার বাড়িতে নিজেদের দুটো জামা কাচার জন্য আলাদা সার্ফ আনতে হচ্ছে। এসব চলবেনা।" ছিনিয়ে নিলো সার্ফের প্যাকেট। জীবন যেন অসহনীয় হয়ে উঠলো। এরপর একদিন সেই বউটির ভাইয়েরা ননদের ওখানে এলো তার বোন আর ভাগনী কে দেখতে। স্বামীটি অনেক রকম মিষ্টি কিনে আনতেই তার দিদি তারস্বরে বলে উঠলো— "ঢং যত্তসব!! এতো মিষ্টি এনে পয়সা নষ্টের কী আছে?ঘরে বিস্কুট তো ছিলোই, একটু চা দিয়ে দিলেই হতো।"
দাদারা তার সে মিষ্টি মুখে না তুলে ফিরে গেলো বাড়ি। তাদের কানে পৌঁছেছিল কথাগুলো। গলা দিয়ে মিষ্টি নামত না তাদের। তাই কাজের তাড়ার অজুহাতে ফিরে গেছিলো সেদিন। যাই হোক তাদের সারাজীবন ও বাড়িতে থাকতে হয়নি। নিজেদের একটা বন্দোবস্ত করতে পেরেছিলো ওরা। তারপর বহু বছর পর মেয়েটি তখন কলেজে, হঠাৎ সেরীব্রাল স্ট্রোক হয়ে হাসপাতালে আই সি ইউ তে ধুঁকছে সে। এমন সময় সেই শুভাকাঙ্খী দিদি এলেন। তার স্ত্রী কে ডেকে বললেন,
"হায় হায়!! তোমার মেয়েতো এবার মানুষ হবেনা। সংসার টা ভেসে গেলো তো। কী খাবে গো তোমরা?" কত চিন্তা ভদ্রমহিলার,কী বলবো।
মেয়েটি এগিয়ে এসে বললো— "পিসি আমার বাবা গভর্নমেন্ট সার্ভিস করেন। আশাকরি আমরা বেঁচে যাবো। তুমি বরং আর এসোনা।"
ওই টুকু মেয়ের অমন চ্যাটাং চ্যাটাং কথায় খেপে,রেগে পিসিটি বিদায় নিলো।
বহু বছর অসুস্থ অবস্থায় ভদ্রলোক অফিস করলেন, অবসর ও হলো সময় মতো। তারপর তিনি পুরো বিছানায় শয্যা নিলেন। একদিন মারা গেলেন। এতগুলো বছরে না এলো কোনো শুভাকাঙ্খী না করলো কেউ সাহায্য। এতোদিনে মেয়েটি বিবাহিত, ঘর সংসার করছে। এমনকী একটি সরকারী চাকরীও জুটেছে তার। একদিন ট্রেনের কামরায় পিসতুতো দিদির সাথে হঠাৎ দেখা,
—- "কী রে খবর কী?"
—- "এই তো চলছে।"
—- "কোথায় যাচ্ছিস?"
—- "স্কুলে।"
—- "মানে তুই চাকরী করিস?নিশ্চয়ই প্রাইভেট?"
—- "না সরকারী।"
—- "সরকারী? কী ভাবে পেলি?"
—- "পরীক্ষা দিয়ে।"
—- "আমিও পেতাম কিন্তু করলাম না। সংসার আগে তারপর ওসব।"
—- "ও ভালো।"
হঠাৎ পাশ থেকে এক সহযাত্রী মেয়েটিকে ডেকে ওঠে,
—- "মিসেস দাস মুখার্জ্জী!!"
দিদিটি বাঁকা দৃষ্টিতে বলল;
—- "তোকে ডাকলো?"
—- "হ্যাঁ। "
—- "ও আবার কী পদবী?"
—- "কেন বিয়ের আগে মুখার্জ্জী আর এখন দাস।"
—- "বাব্বা!! বরের টাইটেল টা নেওয়া যায়না বুঝি?"
—- "কই নিয়েছি তো।"
—- "দাস কে বিয়ে করেছিস? প্রেম!!বাবা কী সাহস।"
—- "হ্যাঁ আমি বরাবরই সাহসী। চলি আমার স্টেশান এসে গেছে।"
দিদিটি বোকার মত ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো।



                                                              - সঙ্ঘমিত্রা প্রামাণিক চ্যাটার্জ্জী

" গিফট " - সুফি রায়

ঋকের জেদ দেখে মনে পড়ছে, টুসিও ছোটবেলায় একবার সান্তাক্লজের সাথে দেখা করবে বলে রাতে ঘুমের ভান করে শুয়েছিল। আর পরদিন খুব কেঁদেছিল এই বলে যে, "সান্তা আমাকে চিট্ করেছে, এতদিন সান্তা আমাকে একটাও গিফট দেয়নি।" ঋকও তো সান্তার সাথে দেখা করেই ছাড়বে। বলে গেছে, "সান্তা আসলে আটকে রাখবে মাম্মাম, অনেক গিফট চাওয়ার আছে।"

        হঠাৎ একটা ফোন পেয়ে ছুটে বেরিয়ে গেল টুসি।
ডাক্তার : "আপাতত লাইফ রিস্ক নেই, কিনতু অনেকটা ব্লাড দিতে হয়েছে। তবে এই লোকটা সময় মত না নিয়ে এলে মুশকিল হত।"
টুসি দেখল ময়লা গেঞ্জি আর খাটো করে লুঙ্গি পড়া, ধবধবে চুল-দাড়িওয়ালা একটা বুড়ো একটু দূরে দাঁড়িয়ে গামছায় ঘাম মুছছে। টুসি কাঁদতে কাঁদতে গিয়ে তার দুহাত ধরে বসে পড়ল। ঋককে সান্তার সাথে মিট করাতে পারবে কিনা জানা নেই; কিনতু আজ এতবছর পর ওর সান্তা ওকে সবচেয়ে দামী গিফট টা দিয়ে গেল।

                                    

                                                                             - সুফি রায়

" Sil Vous Plait " - রণবীর বন্দ্যোপাধ্যায়


"Sil vous plait"
Passionately I cry out,
I cry out in my frenzy…

Come, stand  close to me -
Neither shall I touch,
Nor shall I impair,
Thy soul covert…

But I shall scout….
— The beauty of the truth,
— The stillness of thyself,
The elegance of eternity …

Uncorroborated !

                                 

                                - Ranabir Banerjee

রবিবার, ৯ জুলাই, ২০১৭

" অথ: মুদ্রা কথা " - সুফি রায়

শোনো শোনো বন্ধুগণ শোনো দিয়া মন।
এক অদ্ভুত মুদ্রাকথা কহিব এখন॥
এক যে ছিল রাজা, তাঁর নব অভিষেক।
"মোর রাজ্যে সবে সুখ-শান্তি পাইবেক"॥
সেই মতো করে কাজ ভাবিয়া-চিন্তিয়া।
একদিন দিল রাজা ঢ্যাঁড়া পিটাইয়া॥
"শুন শুন রাজ্যবাসী শুনহ সকল।
স্বর্ণ-রৌপ্য ইতি আদি মুদ্রারা অচল॥
যে করে তোলাবাজি, রাহাজানি, প্রতারণা।
চলিবে না আর তাহাদের মন্ত্রণা॥
কোনমতে তাহারা না পাইবে উদ্ধার।
রাখিব সুনীতি আর দুর্নীতি সংহার॥
নতুন দিবস হতে এ রহিল ঘোষণ।
যা হয় উচিত কার্য করহ এখন"॥
এমত শুনিয়া সবে ছুটে কোষাগারে।
"যা আছে সঞ্চয় সব আনি রাখি ঘরে"॥
সবে ভাবে এইমত, কোষাগারে ঠেলাঠেলি।
না পাইল সবে তঙ্কা দেয় গালাগালি॥
টাকার কুমীর যত আকুলি-বিকুলি।
উড়িল রাতের ঘুম অন্নজল ভুলি॥
"রাশি রাশি ধনরাশি কেমনে উদ্ধারি।
কত যত্ন করি আমি তুলিলাম গড়ি"॥
কেহ কয়,"দশ বর্ষ বেসাতি করি।
বিকাই-খরিদ আনি শিশু আর নারী॥
এই মতে করিলাম লক্ষ দুই হাজার।
এখন কেমনে করি ইহার সৎকার"॥
কেহ কয়,"ছিলাম সুখেতে বেশ করিয়া কারবার।
এখন কীমতে করি দেহাংশ পাচার"॥
আর বলে,"এতকাল জমা ছিল খাজনা।
মনে বুঝি এইসব মোটে ভালো কাজ না"॥
মহাজন চড়া হারে সুদ লইত যত।
ঘোষণা শুনিয়া নিজের চুল ছিঁড়ে তত॥
ঘুষখোড় ঘুষ খায় এহাতে বা দুহাতে।
এখন আকাশ পড়ে ভাঙিয়া মাথাতে॥
টাকার শোকেতে সবে করে গালাগালি।
"কী করিলি পাগলা রাজা,তোর মুখে কালি"॥
শুনি রাজা শুধু হাসে থাকে নিরুত্তর।
নির্ধন কয়,"ক্ষতি কী,মোদের কীবা ডর॥
না জানি কী সুখ,তবু না করি বিবাদ।
না পাইনু রতন,তবু না মানি বিষাদ॥
খেটে খাই,আর কভু নাই বা খাই।
যবে যাহা পাই, শুধু সেইটুকু খাই॥
ক্ষুধার তাড়না এ যে বড় বিসম্বাদ।
তবু না হইনু পাপী, দেখ গণনাথ॥
আনিও সাম্যাবস্থা করিও বিচার।
সবে যেন একমতে পারি বাঁচিবার"॥
গরীব রাখিল আশা সুদিনের তরে।
রাজায় ফেলিল ঘুঁটি সেই মত করে॥
দুনিয়ার এই রীতি যেবা ধনবান।
তাহারই চাহিদা হয় পাহাড়-প্রমাণ॥
যেবা খায় পরিমিত, ন্যূন আহার।
সেই করে পাপ-পুণ্য বুঝিয়া বিচার॥
এইমত মুদ্রাকথা করিনু বর্ণন।
এবে মোর মুদ্রাকথা হয় সমাপন॥

                                            

                   - সুফি রায়

" অজানার দিকে " - রণবীর বন্দ্যোপাধ্যায়

সূর্যের সাথে
পথচলা শুরু করে,
পায়ে পায়ে পেরিয়ে তপ্ত
দুরন্ত দুপুর...

সাঁঝবেলার হাওয়ায় এলোমেলো,
ঝিরিঝিরি কাঁপা,
নতুন পাতা ভিজিয়ে দেওয়া
উচ্ছল ধারায়, আধভেজা আমি
চলি অজানায়।

কালো সন্ধ্যায়
"আরো কতদূর?"
প্রশ্ন করে এক অনামিকা
কাঁপা কাঁপা স্বরে-
হাতটা ধরি তার;
বলে উঠি..
নয় তো আর বেশি দূর-
এই তো, এখানেই..॥

                        
                
                      - রণবীর বন্দ্যোপাধ্যায়

শুক্রবার, ৭ জুলাই, ২০১৭

" বৃক্ষ দিবস " - গৌরব হালদার




সাদা বাড়িটার চারপাশে বেশকিছু মানুষ

অল্প অল্প গল্প...
মোবাইলের সেলফি স্টিকে
একের পর এক ছবি।
মাঝে মাঝে চেচিঁয়ে বলে,
"এটা হেভি... এটা হেভি..."
কিছু মানুষের হাতে মিষ্টি, ফুল
সাদা বাড়ির মানুষগুলোর উৎসুক চাহনি-
ঝাপসা চশমার কাঁচের ভিতর দিয়ে
অস্পষ্ট দৃষ্টি বাহিরে নিক্ষেপ...
"আমার নাতিটা আসেনি,"... আক্ষেপ...
দলবেধেঁ বাড়িটার ভিতরে প্ৰবেশ
মিষ্টি,ফুল উপহার-
কয়েকজনের ছবি তোলা, কয়েকজন লাইভ,
একসাথে বাবা-মা, থুড়ি বুড়ো-বুড়ি
সময় মিনিট ফাইভ....
তার মধ্যে হাজার প্ৰশ্ন, নাতি-পুতির কথা...
উফ্!!, অসহ্য ভাই...
তারপরে তে বাই বাই...
ফিরে এসে Fb পোস্ট,
আজ Old Age Day,
Old Age Home ঘুরে এলাম তাই...|

                                         

                                         -  গৌরব হালদার